এম,এ সবুর রানা , রামপাল (বাগেরহাট) ||
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার। দেশের আর্থ- সামাজিক উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে সার্বিক উন্নয়নে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছানোর অঙ্গিকার থাকলেও বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার কয়েকটি এলাকায় দেড় থেকে ২ শতাধিক দরিদ্র পরিবার বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
জানা গেছে, পশুর নদীর তীরে রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নে বহুল আলোচিত বাংলাদেশ- ভারত মৈত্রি কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ নির্মান প্রকল্পের সীমানার গা ঘেষে সরকারের কাছ থেকে খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে প্রায় ৪ শতাধিক ভুমিহীন পরিবার দীর্ঘদিন ধরে কৈগর্দাসকাঠির চরে বসবাস করছে। ওই পরিবারে গুলোর মধ্যে প্রায় ১৩২ টির মতো পরিবার বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হলেও বাকি
সহশ্রাধিক মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
সরেজমিনে ওই চরের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলাচলের জন্য তাদের ভাগা-চালনা রাস্তা ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। এই রাস্তার উত্তর পাশে বিলের মধ্যে তাদের বসবাস। এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে হলে ঘেরের বেড়ি বাঁধের উপর দিয়ে যেতে হয়। বৃষ্টি হলে চলাচলের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বেশির ভাগ পরিবার মাটির দেওয়াল তুলে গোলপাতা অথবা নাড়ার ছাউনি দিয়ে বসবাস করছে। চারদিকে বিদ্যুতের আলো ঝলমল করলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি বিদ্যুতের আলো। হাতে গোনা দুই-একটি বাড়িতে রয়েছে সোলার প্যানেল। সন্ধ্যা নামলেই বেশির ভাগ মানুষ ঘরে কেরোসিনের বাতি জালান। ইংরেজী জানা ভ্যান চালক মোঃ সোহাগ হাওলাদার এবং রাহিলা বেগম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ব্যহত হচ্ছে। টেলিভিশন দেখতে পারিনা। মোবাইল নেটওয়ার্কও দুর্বল। আমরা মিটারের জন্য টাকা দিয়েছি, এখনও সংযোগ পাইনি।
যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌছায়নি সেইসব এলাকার ঘরে ঘরে ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌছানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার । রামপাল পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির একটি সুত্র জানায়, ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট রামপাল উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন করার ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। অথচ এ উপজেলার কেগর্দাসকাঠির চর, রামপাল সদরের কামরাঙ্গার চর, সিংগড়বুনিয়ার চর, গোবিন্দপুর মধ্য পাড়া , গোবিন্দপুর গড়ের কোনার চর, মুজিবনগর চর এলাকায় অনেক পরিবারে এখনও বিদ্যুৎ পৌছায়নি। উল্লেখ্য, পল্লী বিদ্যুতের রামপাল সাব জোনাল অফিসের আওতায় রামপাল ও মোংলা উপজেলায় মোট গ্রাহক সংযোগ দেয়া হয়েছে ৬২ হাজার ৪৩৭টি। এর মধ্যে রামপাল উপজেলায় ৩৫ হাজার ৬৩৩ ও মোংলা উপজেলায় ২৬ হাজার ৮০৪ টি। সংযোগ স্থাপনের জন্য লাইন টানা আছে ২ হাজার ২৫০ কি.মি.। এর মধ্যে রামপাল উপজেলায় ১ হাজার ২৮৭ ও মোংলা উপজেলায় ৯৬৩ কি.মি.। রামপাল পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা জানান, রামপাল ও মোংলা উপজেলায় ১০৩ টিতে সংযোগ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সুত্র আরও জানায়, রামপাল উপজেলার কৈগর্দাসকাঠির চরে নুতন সংযোগের জন্য ১৩২টি লাইন টানা হয়েছে। এ ছাড়া সংযোগ পাওয়ার জন্য ৫৫টির মতো আবেদন জমা পড়েছে। ৭৭ টি পরিবার সংযোগের জন্য কোন আবেদন করেনি।
এ ব্যপারে বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম বলেন, রামপাল উপজেলাকে বিদ্যুতায়নের শতভাগ ঘোষনা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এরপরও নুতন নুতন বাড়ি ঘর হচ্ছে। সরকার যতক্ষন বলবে ততক্ষন লাইন দেয়া হবে। যারা বাকি আছে তাদেরও লাইন দেয়া হবে। রামপাল পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম ইমদাদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, ওই কৈগর্দাসকাঠির চরের কিছু লোকের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। পর্যায়ক্রমে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়া হবে। এখানকার মানুষ গরীব হওয়ায় সহসা টাকা জমা দিয়ে সংযোগের জন্য আবেদন করছেনা। কিছু বাড়িতে মিটার দেওয়া হয়েছে, তাদের সংযোগও দেওয়া হবে। তবে এখানকার অনেক মানুষ বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত রয়েছে বলে তিনি শিকার করে বলেন তারা আবেদন করলে তাদের সংযোগ দেওয়া হবে । গোবিন্দপুর গ্রামের মধ্যে পাড়ার কয়েকটি পরিবার একটি প্রভাবশালী মহলের বাধার কারনে ঠিকাদার খূটি বসাতে পারছেনা এ প্রসঙ্গে ডিজিএম বলেন ঠিকাদার গোবিন্দপুর খুটি নিয়ে বসাতে গেলেও বসাতে দেওয়া হয়নি। এটা স্থানীয় ভাবে মিমাংশা করে বসানো কথা ছিল। কৈগর্দাসকাঠির চর এলাকায় বেশ কিছু ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। অনেকে আবেদন করেছে। ওই এলাকার মানুষ বেশ দরিদ্র হওয়ায় তাদের সবাই এক সাথে মিটারের জন্য টাকা জমা দিতে পারছেনা। আমরা সংযোগ দিতে আগ্রহী। তাদের উদ্যেগী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
Add Comment