সারাদেশ

পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থান বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন তৃতীয়। একই সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিতেও শীর্ষে এ দেশ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে এখন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৩৩ লাখ টনেরও বেশি। বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় চীন ও ভারতে।

দেশে গত বছর সাড়ে পাঁচ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিলো। আমদানিতে দেশের পরেই আছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেঁয়াজের ক্রমবর্ধমান দাম, উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান, ভালো মানের বীজের অভাবসহ কয়েকটি কারণে চাহিদার তুলনায় দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। শুধু উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান কমিয়ে আনা এবং উৎপাদনের পরিমাণ আরেকটু বাড়াতে পারলেই কয়েক বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব।

এর পাশাপাশি কৃষকদেরও সচেতন করা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। অনাবাদি ও চরের জমি পেঁয়াজ চাষে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভালো বীজ সহজলভ্য করতে হবে এবং উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোর চাষ বাড়াতে হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ২০২০-২১ সালে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩৫ লাখ টন। চলতি ২০২১-২২ সালের জন্য চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টন। আগামী বছর এ চাহিদা ৩৬ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। এর মধ্যে আসন্ন রমজানে পেঁয়াজের চাহিদা তিন লাখ টনের ওপর থাকে।

কৃষি বিপণন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩৩ দশমিক ৬২ লাখ টন। পেঁয়াজের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। সে হিসাবে নিট উৎপাদন প্রায় ২৩ দশমিক ৫৩ লাখ টন। রান্নার সময় ফেলে দেয়া অংশ এবং নানাভাবে হওয়া অপচয় বাদ দিলে দেশে পেঁয়াজের নিট চাহিদা ২৬ লাখ ৬১ হাজার টন। অর্থাৎ দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি আড়াই থেকে তিন লাখ টন।

২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পেঁয়াজ চাষের জমির পরিমাণ ৪১ শতাংশ বেড়েছে। ২০১১-১২ সালে দেশে এক লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল। সর্বশেষ গত অর্থবছর দেশে দুই দশমিক ৫৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন কৃষকরা।

দেশে আমদানি কমছে, বিশ্বে পেঁয়াজ আমদানি বাড়ছে

দেশে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। এরপরও বাংলাদেশ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানিকারী দেশ। কৃষি বিপণন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হতো। কিন্তু গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে পাঁচ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন। তার আগের বছর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি করা হয় পাঁচ দশমিক ৭১ টন।

পক্ষান্তরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, গত অর্থবছরে দেশে মোট ১২ লাখ ৯৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৯-২০ সালে হয়েছিলো ১১ লাখ ৭৬ হাজার টন।

পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে চায় কৃষি মন্ত্রণালয়

পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় একটি রোডম্যাপ তৈরি করে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই রোডম্যাপে পেঁয়াজ ঘাটতি ১১ লাখ টন ধরে উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণ করে। তাতে পেঁয়াজ ঘাটতির জন্য মানসম্মত বীজের অভাবকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেশে মোট এক হাজার ১০০ টন বীজের প্রয়োজন। সরকারিভাবে ৫-৬ টন এবং বেসরকারিভাবে ৫০-৬০ টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করা হয়। বাকিটা উৎপাদন করেন কৃষক, যা পুরোপুরি মানসম্মত নয়।

পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনকারী ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষি অর্থনীতিবিদ আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, কৃষি উৎপাদনশীলতার মৌলিক ভিত্তি হচ্ছে বীজের গুণগত মান। ফলন বৃদ্ধির পুরোটাই নির্ভর করে উচ্চমানসম্পন্ন বীজের ওপর। কৃষকরা সাধারণত উৎপাদন ব্যয় কমাতে নিম্নমানের বীজ ব্যবহার করেন।

তিনি আরও বলেন, কৃষকের সংরক্ষণ করা বীজে প্রতি একর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় মাত্র দুই থেকে আড়াই টন। উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ থেকে প্রতি একরে ১০-১২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। লালতীর-কিং বীজে প্রতি একরে সাত-আট টন, লালতীর-২০ বীজে ৫-৬ টন এবং লালতীর-হাইব্রিড বীজ থেকে ১০-১২ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। পেঁয়াজের চারা থেকে প্রতি একর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তিন-চার মেট্রিক টন। তাই পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে উন্নতমানের হাইব্রিড বীজ চাষের বিকল্প নেই।

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১