ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের (ডব্লিউএফএফ) এক ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে অংশ নিতে ইতালি সফর করে এলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ইভেন্টটি ছিল রোমে, তাই সফরও ছিল এই শহরে। ১২ অক্টোবর তিনি ইতালি রওনা হন, দুই দিনের সফর শেষ করে গত বুধবার তিনি ফিরেও এসেছেন।
অধ্যাপক ইউনূসের ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ইতালি যাওয়ার পরপরই তাঁর এই সফর নিয়ে নানা খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয় নানা আলোচনা। এর কোনো কোনোটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় নানা বিভ্রান্তিও তৈরি হয়। দেখা যাক, এই খবরগুলোর কোনটি কতটুকু ঠিক।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে বৈঠক কি নির্ধারিত ছিল
রোমে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে খবর ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
আসলে কি এমন কোনো বৈঠক হওয়ার কথা ছিল? এ খবরের উৎস খুঁজতে গিয়ে গণমাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদনগুলো তথ্যের উৎস হিসেবে দেখিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসকে।
প্রকাশিত এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, সফরসূচি অনুযায়ী অধ্যাপক ইউনূস ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের মূল অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
সংবাদটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসে যে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন না।
দাবি করা লিংক: এখানে, এখানে, এখানে
বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজের ফেসবুক পেজে একটি ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘কিছু সংবাদপত্র এবং রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বিএসএস বলেছে যে প্রধান উপদেষ্টা রোম সফরের সময় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বিএসএস বা কোনো সংবাদপত্রই এই সফর নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেনি।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আমি বুধবার (৮ অক্টোবর) এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এবং পরে দুটি টিভি স্টেশনে বলেছিলাম যে প্রধান উপদেষ্টা রোমে ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম সভায় অংশ নিতে যাচ্ছেন। আমি বলেছিলাম, সফরকালে তিনি আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন। এই সংবাদ সম্মেলনগুলোয় আমি কোথাও বলিনি যে প্রধান উপদেষ্টা ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। আসলে এমন কোনো বৈঠক নির্ধারিতই ছিল না। আমি আশা করি, সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের প্রতিবেদনগুলো সংশোধন করবে।’
প্রেস সচিবের সংবাদ ব্রিফিংয়ের লিংক—ইউটিউবে, ফেসবুকে
প্রেস সচিবের এ পোস্টের পর দেখা যায়, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) তাদের প্রকাশিত সংবাদ সংশোধন করেছে এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের অংশটি সরিয়ে নিয়েছে। তবে কিছু সংবাদমাধ্যম এখনো প্রথম সংস্করণের প্রতিবেদন, অর্থাৎ ‘ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন’—এই তথ্যসহ সংবাদটি রেখেছে।
লিংক—এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
সংবাদ থেকে তথ্য সরিয়ে নিলেও তার কোনো ব্যাখ্যা বাসস দেয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের কথায় স্পষ্ট, জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের নির্ধারিত কোনো বৈঠক ছিল না।
অধ্যাপক ইউনূস কি গুরুত্ব কম পেয়েছেন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইতালির রাজধানী রোমে পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ টি এম রকিবুল হক। এ ছবি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০২৩ সালের রোম সফরের তুলনা।
বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হয়, ‘একই প্রোগ্রামে’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালে রোমে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি নিজে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।
Add Comment