ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার–প্রচারণা চলছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সব শিক্ষার্থীর কাছে নাম ও ব্যালট নাম্বার পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রার্থীদের। ফলে কোনো কোনো প্রার্থী নিয়েছেন অভিনব কৌশল। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে টাকা ও ডলারের আদলে লিফলেট বানিয়ে চালাচ্ছেন প্রচার।
ডাকসু ও হল সংসদের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। ছেলেদের হলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ও মেয়েদের হলে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচারের সুযোগ রয়েছে। তবে প্রচারে মানতে হচ্ছে কড়া আচরণবিধি।
আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থীরা যেকোনো হ্যান্ডবিল, পোস্টার ও লিফলেট বিলি করতে পারবেন। তবে ক্যাম্পাসের কোথাও এগুলো টানানো কিংবা সাঁটানো যাবে না। ফলে লিফলেট ছাড়া এবার তেমন দৃশ্যমান প্রচার করতে পারছেন না প্রার্থীরা। এতে বেগ পেতে হচ্ছে তাঁদের।
এ অবস্থায় প্রচারে ব্যতিক্রমী কৌশল নিয়েছেন কয়েকজন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরাফাত হোসেন। ডাকসু নির্বাচনে সদস্যপদে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তাঁর ব্যালট নাম্বার ১৭০। ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশের এক হাজার টাকার নোটের আদলে লিফলেট ছাপিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি।
এক হাজার টাকার নোটের আদলে বানানো এই ব্যালটের সামনের অংশে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’–এর জায়গায় লেখা হয়েছে ‘ডাকসু ভোট ব্যাংক’। আর ‘চাহিবামাত্র ইহার বাহককে এক হাজার টাকা দিতে বাধ্য থাকিবেন’–এর জায়গায় লেখা হয়েছে ‘চাহিবামাত্র ইহার প্রার্থীকে একশত সত্তর ব্যালটে ভোট দিয়ে বাধিত করবেন’। আসল নোটে যেখানে গভর্নরের নাম লেখা থাকে, সেখানে ব্যালটে লেখা হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কার্যকরী সদস্য পদপ্রার্থী মো. আরাফাত হোসেন’। আর পদবি হিসেবে লেখা হয়েছে উদ্যোক্তা।

আর পেছনের অংশে আসল নোটে যেখানে জাতীয় সংসদের ছবি থাকে, সেখানে ব্যালটে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের ছবি’ রাখা হয়েছে। এই ছবির পাশেই দেওয়া হয়েছে একটি কিউআর কোড। সেটি স্ক্যান করলেই দেখা যাচ্ছে তাঁর ইশতেহার। আর আসল নোটের চার কোনায় যেখানে টাকার পরিমাণ লেখা থাকে, সেখানে তিনি লিখেছেন ব্যালট নাম্বার ১৭০।
আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে কথা হয় আরাফাত হোসেনের সঙ্গে। ব্যতিক্রমী এই প্রচারের কথা কীভাবে মাথায় এল জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ডাকসুতে সদস্যপদে ২১৭ প্রার্থী। এত প্রার্থীর মধ্যে ভোটাররা আসলে প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট নাম্বার মনে রাখতে পারছেন না। সেই জায়গা থেকে আমার মনে হয়েছে, মনোযোগ আকর্ষণ করতে হলে আলাদা কিছু করতে হবে। যেহেতু টাকার প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি থাকে, সে কারণে আমি টাকার আদলে লিফলেট ছাপিয়েছি। এখন ভোটারদের কাছ থেকে অনেক সাড়া পাচ্ছি। ভোটাররা এসে আমার কাছ থেকে লিফলেট নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই লিফলেট নেওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করছেন।’
পদবি উদ্যোক্তা লিখলেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আরাফাত হোসেন বলেন, “সরলীকরণ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তা আমি। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীদের সনদ, নম্বরপত্র, প্রশংসাপত্র ইত্যাদি মূল্যবান কাগজপত্রের ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করি। শুধু তা–ই নয়, হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট ডেলিভারি নেওয়া, বই কিনে পাঠানো, কাগজ সত্যায়িত করে জমা দেওয়াসহ নানা রকম ব্যক্তিগত কাজ করে দেয় সরলীকরণ। মূলত যেসব শিক্ষার্থী ঢাকার বাইরে থাকেন, কিন্তু হঠাৎ প্রয়োজনে ঢাকা আসতে পারেন না, তাঁরাই এই সেবা নেন। আমরা অত্যন্ত বিশ্বাসের সঙ্গে এ কাজটি করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েটে আমাদের এই সেবা চালু রয়েছে।’
এ ছাড়া স্যার এ এফ রহমান হল সংসদ নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নাইমুর রহমান। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে মার্কিন ডলারের (ইউএস) আদলে লিফলেট বানিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। হল সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদে তাঁর ব্যালট নাম্বার ১। যার কারণে এক ডলারের আদলে লিফলেট বানিয়েছেন তিনি।
ডলার আকৃতির এই লিফলেটে দেখা যায়, ডলারের চার কোনায় যেখানে পরিমাণ লেখা থাকে, সেখানে লিফলেটে তিনি ব্যালট নাম্বার ‘এক’ লিখেছেন। আর ওপরের অংশে লেখা ফেডারেল রিজার্ভ নোট। মাঝামাঝি অংশে লেখা ‘আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন–২০২৫’। স্যার এ এফ রহমান হল সংসদে ভিপি পদপ্রার্থী (স্বতন্ত্র)। তার নিচে লেখা ‘নাইমুর রহমান, দর্শন বিভাগ, সেশন ২০১৯–২০’। পাশেই দেওয়া হয়েছে একটি কিউআর কোড। সেটি স্ক্যান করলেই তাঁর ফেসবুক আইডি দেখা যাচ্ছে। আর লিফলেটের শেষ অংশে লেখা রয়েছে ‘ওয়ান ডলার’। যেটা মূলত ব্যালট নাম্বার বোঝাতে ব্যবহার করেছেন তিনি।
Add Comment