বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে ঘিরে সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে চলছে নানামুখী আলোচনা। ১৭ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরায় তাঁকে স্বাগত জানিয়ে সিলেটে আনন্দমিছিলের পর নগরজুড়ে পোস্টারিং হয়েছে। বেনামি এই পোস্টারে তাঁকে ‘মর্যাদাপূর্ণ’ সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, সিলেটের মেয়ে জুবাইদা রহমান সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হলে সেটা দলের জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ হবে। কিন্তু জুবাইদার সম্মতি ছাড়া ‘বেনামে’ যদি তাঁর প্রার্থিতার বিষয়ে পোস্টার সাঁটিয়ে প্রচারণা চালানো হয়, তবে বুঝতে হবে, এখানে অন্য কোনো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ আছে।
এদিকে জুবাইদা রহমানকে নিয়ে সিলেটে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন যুক্তরাজ্য ভ্রমণ শেষে ১৮ দিন পর দেশে ফিরে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীও একই ইঙ্গিত দেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাজারো কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে নিজ বাসভবনের সামনে মতবিনিময়কালে বলেন, লন্ডন সফরকালে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সিলেট-১ (নগর-সদর) আসনে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করেছেন। তারেক রহমান প্রার্থী না হলে জিয়া পরিবারের কেউ যেন প্রার্থী হন, সে দাবিও জানিয়েছেন।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে আরিফুল হক সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের কাউকে প্রার্থী করার বিষয়ে বিভিন্ন সভায় বক্তব্য দেন। সেসব ফেসবুকে ভাইরাল হয়। মূলত এর পরেই জুবাইদাকে নিয়ে সিলেটে আলোচনা শুরু হয়। এ থেকেই কেউ অনুপ্রাণিত হয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন কি না, এটাও অনেকে ভাবছেন।

পেশায় চিকিৎসক জুবাইদা রহমানের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৬ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন জুবাইদা রহমান। তিনি তাঁর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। এর মধ্যে ১৭ বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি জুবাইদা রহমান।
জুবাইদা রহমান প্রয়াত রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীর মেয়ে। মাহবুব আলী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়ে তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।১৯৯৪ সালে তারেক রহমানের সঙ্গে জুবাইদা রহমানের বিয়ে হয়।
শহরজুড়ে ‘জুবাইদার পোস্টার’
বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, এর আগেও জুবাইদার দলীয় রাজনীতি কিংবা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা ছিল। সম্প্রতি সিলেট বিএনপির একটা অংশ জুবাইদাকে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী করতে তৎপর। ১৭ বছর পর দেশে ফেরায় তাঁকে স্বাগত জানিয়ে ‘ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দের’ ব্যানারে শুভেচ্ছা মিছিলও বের হয়। এ মিছিল থেকে জুবাইদাকে রাজনীতিতে সার্বক্ষণিক যুক্ত হওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় জুবাইদা রহমানের ছবিসহ রঙিন পোস্টার কে বা কারা সাঁটিয়ে দেন। এতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিও আছে। পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘বাংলাদেশের অহংকার, সিলেটবাসীর গর্ব ডা. জোবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১-এর সাংসদ হিসাবে আমরা অবহেলিত, বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসাবে দেখতে চাই।’
পোস্টারটি নগরজুড়ে লাগানোর পরপরই বিএনপির ভেতরে-বাইরে আলোচনা শুরু হয়। জুবাইদা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন নাকি হবেন না, এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চলে তুমুল আলোচনা।
বেনামি পোস্টার নিয়ে প্রশ্ন, কৌতূহল
বিএনপির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, পরিচয় গোপন রেখে জুবাইদাকে নিয়ে পোস্টার সাঁটানোর কারণে সবার মধ্যেই প্রবল কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারা কী উদ্দেশ্যে এ পোস্টার সাঁটিয়েছেন, এ নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এর পেছনে কারও গোপন উদ্দেশ্য আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির এক নেতা জানান, কেউ কেউ ধারণা করছেন, পোস্টার সাঁটানোর নেপথ্যে আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠজনেরা সম্পৃক্ত আছেন। কারণ, কিছুদিন আগে আরিফুল হক সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়ে যুক্তরাজ্যের একাধিক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।
অন্যদিকে মহানগর বিএনপির আরও এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পোস্টারে তো আপত্তিকর কিছু ছিল না। দলের কোনো কর্মী যদি জিয়া পরিবারের প্রতি আস্থা দেখিয়ে এমন পোস্টার সাঁটিয়ে থাকে, তাহলে দোষটা কোথায়? এ নিয়ে দলের ভেতরে কিছু নেতার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আর অতি উৎসাহী মনোভাবও তৃণমূলের কর্মীরা ভালোভাবে নিচ্ছেন না।
Add Comment