ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় পর প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।জামায়াত ইসলামের আলোচিত এই ছাত্র সংগঠনের প্রকাশ্যে আসার ঘোষণার পরে ক্যাম্পাস জুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে আলোচনা। সদ্য ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কৌতূহল।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে সাদিক কায়েম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বর্তমান সভাপতি হিসেবে দাবি করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এই শিবির নেতার বাড়ি চটগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলায়। পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন হিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দা সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ।
আজ বিকেল তিনটার দিকে নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকে দেওয়া এক পোস্টে সাদিক লিখেন,ফ্যাসিস্ট শোষণ শুধু ছাত্র রাজনীতি নয়, রাজনীতির সংজ্ঞাই পালটে দিয়েছে। ফ্যাসিবাদে কোনো রাজনীতি থাকে না। বিরাজনীতি ফ্যাসিবাদের ভাষা।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংস্কারে অবশ্যই চব্বিশের শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে, তা না হলে ভেস্তে যাবে আমাদের এই স্বাধীনতা। আমরা চাই ছাত্র রাজনীতির সংস্কার গবেষণা, পলিসি ডায়ালগের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়িত হোক।নতুন গণতান্ত্রিক দেশে কেউ যাতে ফের স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে সেদিকেও সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান এই শিবির নেতা।
তার এই পোস্ট মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যম গুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেই পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ।শেয়ার হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার বার।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে জামায়েত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরে ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ছিল সবমহলে।আওয়ামী লীগের শুরু থেকে বরাবরই দাবি করে আসছিল এ আন্দোলনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে জামায়াত-শিবির। যদিও ছাত্রসংগঠনটি পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের এ দাবির বিরোধিতা বা সমর্থন করে কিছু বলা হয়নি
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি দাবী করা সাদিক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। সাম্প্রতিক সময়ে প্ল্যাটফর্মটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে শিবিরের এই শীর্ষ নেতাকে বেশ সরব দেখা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে।২০১১-১২ শিবিরের কোন ধরনের প্রকাশ্য কার্যক্রম ক্যাম্পাসে ছিল না বলে জানান সে সময় থেকে ক্যাম্পাসে থাকা শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির প্রকাশ্যে আসা নিয়ে শিক্ষার্থীরা নানা মন্তব্য করছেন।ক্যাম্পাসে সাদিক কাইয়ুম পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি এতদিন বিষয়টি কিভাবে লুকিয়ে রেখেছেন তা নিয়েও অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন হল ও অনুষদে কারা সংগঠনটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তা নিয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে ছাত্রশিবিরের নতুন এই আত্মপ্রকাশ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
শিবিরের প্রকাশে আসা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অন্যান্য ছাত্র সংগঠন। ছাত্রদল কেন্দ্রীয়ভাবে কোন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও সংগঠনটির নেতাকর্মীরা গোপন রাজনীতি বাদ দিয়ে শিবিরের প্রকাশে আসাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।তারা প্রত্যাশা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি ইউনিট ও হলের সব শিবির নেতাকর্মী প্রকাশ্যে এসে আগামীতে ছাত্ররাজনীতি করবেন।
Add Comment