অতীতের ইতিহাস বর্তমান পথ চলার দিকদর্শন। অতীতের ব্যর্থতা—সফলতার নিরিখে সামনে অগ্রসর হতে হবে। যে জাতি অতীতকে ভূলে যায়, সে জাতির কল্যাণ হতে পারেনা। বড়ই আফসুস আমরা বাংলাদেশী মুসলমান অথচ কিভাবে আমরা মুসলিম হলাম, তার সঠিক ও নিখঁুত ইতিহাস অধ্যবদী আমরা জানি না এ জন্য বক্ষমান নিবন্ধে কিছু প্রমাণ্য ও যুক্তি সংগত তথ্য তুলে ধরার প্রয়াস পাব।
ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। একটা পরিপূর্ণ জীবন বিধান (ঈড়সঢ়ষবঃব পড়ফব ড়ভ ষরভব) আজ থেকে প্রায় চৌদ্দশত বছর আগে পৃথিবীর নাভিস্থলে (আরব দেশে) মানবতার শান্তির দূত রহমাতুলিল আলামীন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আগমনে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রাসুলে পাক (সঃ) এর ৬৩ বছর জেন্দেগীর শেষ পর্যায় দশম হিজরীতে আরাফাতের ময়দানে বিদায় হজ্জের ভাষণে উদাত্ত আহবান করেছিলেন—“এখানে যারা উপস্থিত আছেন, তারা আমার বাণী সমূহ অনুপস্থিতদের কাছে পৌছে দিবেন।” এ ঘোষণার পর সাহাবায়ে কেরাম আর অপেক্ষা করেন নি। গোটা বিশ্বের দিক বিদিক, আনাচে কানাচে ইসলামের সুমহান বাণী পৌছাতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ জন্য আজ আমাদের ধর্ম ইসলাম। আমরা বাংলাদেশী মুসলীম।
বাংলাদেশ আরবদেশ হতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। এতদূরে ইসলাম কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হল এ প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে সর্বজনগ্রাহ্য ঐতিহাসিক চ.ক. ঐরঃঃর এর মতামত তুলে ধরছি, প্রাক ইসলামী যুগ থেকে আরবদের সাথে পাক ভারত উপমহাদেশের সাথে একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন—যেমন প্রিয়ার সাথে প্রেমিকের সম্পর্ক। সাধারণত আরবদেশের বনিকগণ বানিজ্যের জন্য লোহিত সাগর, আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী বন্দর গুলোতে আসা যাওয়া করতেন। আরবদেশের বনিকেরা বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলীয় বন্দর গুলোতে এসে চন্দন কাঠ, হাতীর দাঁত, মসলা এবং সূতী কাপড় কিনতেন এবং জাহাজ ভরে সেগুলি নিজেদের দেশে নিয়ে যেতেন।
“বাংলাদেশের সংগ্রামী পীর মাশায়েখ” গ্রন্থে এভাবে বলা হয়েছে—ইসলাম পূর্ব যুগ হতে আরব বণিকরা সামুদ্রিক পথে চীন এবং ইন্দোনেশিয়ার জাভা—সুমাত্রা যাবার পথে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ভিড়াতেন এবং পণ্য বিনিময় করতেন। এ যোগাযোগের সূত্র ধরে দক্ষিণ চীন এবং বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকায় ঈসায়ী ৮ম শতকে এবং হিজরী প্রথম শতকে আরবের মুসলিম বণিক এবং ধর্ম প্রচারক মুবালিগ দ্বারা ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু হয়। এদেশে প্রথম চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, সন্দীপ এবং পরে ব্রাহ্মনপুত্র নদীর পথ ধরে সিলেটে ইসলামের দাওয়াত পৌছে। উলেখ্য মুসলিম শাসক সিলেট বিজয়ের পূর্বে রাজা গৌড় গোবিন্দের রাজ্যে মোঃ বোরহান উদ্দীন নামক একজন মুসলমান বাস করতো, অবশ্যই এটা অগ্রযাত্রী মুসলিম মুবালিগ দ্বারাই তা সম্ভব হয়েছিল। পাক ভারত উপমহাদেশে এভাবে পীর মাশায়েখ দ্বারা ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাজা বাদশাগণ এসেছেন পরে।
ভারতের বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক আলামা সাইয়েদ সুলাইমান নদভী তার লিখিত গ্রন্থ “আরবো কি জাহাজ রানী” তে লিখেছেন মিশর থেকে সুদুর চীন পর্যন্ত প্রলন্বিত দীর্ঘ নৌ—পথে আরবগণ যাতায়াত করতেন। মালাবার উপকুল হয়ে তারা চীনের পথে বঙ্গপোসাগরে প্রবেশ করতেন।
বিশ্ব বিখ্যাত ঐতিহাসিক ফুরফুরা মাদ্রাসার কৃতী ছাত্র আলামা ডঃ মুহাম্মদ মহর আলী তার লেখা গ্রন্থ “ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঃযব গঁংষরসং ড়ভ ইবহমধষ” আরব ভূগোলবিদ আবুল কাশিম উবাইদুলাহ ইবনু খুরদাধবিহ বলেন—যে, স্বরণদ্বীপ এবং গোদাবরী দনী পেরিয়ে এগিয়ে গেলে সমন্দর নামের একটি বন্দর রয়েছে যার আশে পাশে প্রচুর ধান উঃপন্ন হয়। তিনি আরো লিখেছেন যে, এই বন্দরে রয়েছে যার আশে পাশে প্রচুর ধান উৎপন্ন হয়। তিনি আরো লিখেছেন যে, এই বন্দরে কামরূপ (আসাম) থেকে মিষ্টি পানির পথে পনের বিশ দিনে নৌকাযোগে চন্দন কাঠ আনা হয়। আরব ভূগোলবিদ আবু আব্দুলাহ আল ইদরিসীও এই বন্দরের কথা উলেখ করে বলেন, যে এটি একটি বড় বন্দর এবং কামরূপ থেকে নদী পথে কাঠ এনে এখানে বিক্রয় করা হয়। তিনি আরো জানান, এই বন্দরটি একটি বড় নদীর মোহনায় অবস্থিত। এই সব বর্ণনায় ইঙ্গিত বহন করে যে, মেঘনা তীরের চাঁদপুরই ছিল সেই নদী বন্দর, যেখানে আরব বনিকগণ প্রধানত চন্দন কাঠের জন্য আসতেন।
ঐতিহাসিক মিনহাজুদ্দীন সিরাজ রচিত “তাবাকাত—ই—নাসিরী” গ্রন্থে জানা যায়—বিক্রয়ের জন্য উন্নত জাতের ঘোড়া নিয়ে আরবের তথা মুসলিম বণিকেরা স্থল পথে নদীয়া এবং অন্যান্য স্থানে আসতেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কতৃর্ক পরিবেশিত এক তথ্যে দেখা যায়, ঈসায়ী সপ্তম শতাব্দীতে হযরত উমর ফারুক (রাঃ) খিলাফত কালে কয়েকজন ধর্ম প্রচারক বাংলাদেশে আসেন। এদের আমীর ছিলেন হযরত মামুন (রাঃ) এবং হযরত মুহায়মিন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসেন হযরত হামেদ উদ্দীন (রাঃ) হযরত মুর্তাজা (রাঃ) হযরত আব্দুলাহ (রাঃ) হযরত আবু তালিব (রাঃ) ও হোসেন উদ্দীন (রহঃ)। তাদের সাথে কোন অস্ত্র—সস্ত্র সাজ—সরাঞ্জাম থাকতো না। এদেশের প্রচলিত ভাষায় ইসলাম প্রচার করতেন। সত্যিকার মুসলমান তৈরী করার লক্ষ্যে তারা কাজ করতেন।
মুহাদ্দিস ইমাম আবাদান মারওয়ায়ী গ্রন্থ থেকে জানা যায়— হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর সাহাবী মারিক ইবনু ওহাইব নবুওয়াতের পঞ্চম সনে (অথার্ৎ ইসায়ী ৬১৫) হাবশায় (ইথিওপিয়ায়) হিযরত করেন। মাত্র দু’বছর পর (৬১৭ সনে) তিনি কায়েস ইবনু হুযাইফা (রাঃ) উরওয়াহ ইবনু আছাছা (রাঃ) আবু কায়েস ইবনুল হারিস (রাঃ) সহ কিছু সংখ্যক হাবশী মুসলমান সহ দুইটি জাহাজে করে চীনের পথে সমুদ্র পাড়ি দেন। শায়খ যাইনুদ্দীন তার রচিত গ্রন্থ তুহফাতুল মুজাহিদীনে লিখেন যে, ভারতীয় তামীল ভাষায় প্রাচীন গ্রন্থে উলেখ আছে যে, একদল আরব বনিক জাহাজে চড়ে মালাবার এসেছিলেন। তাদের প্রভাবে রাজা চেরুমল পেরুমল ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর মক্কা শরীফ গিয়ে রাসূলুলাহ (সঃ) এর সান্নিধ্য লাভ করেন।
রাসূলুলাহ (সঃ) এর সাহাবী আবু ওয়াক্কাস মালিক ইবনু ওহাইব (রাঃ) দীর্ঘ নয় বছর সফরে ছিলেন। মালাবার রাজা চেরুমল পেরুমল তার কাছেই ইসলামের দাওয়াত পেয়ে ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়। চীনে যাবার পথে তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের বন্দর গুলোতেও নোঙ্গর করতে হয়েছিল। আর ঐ সময়ে তার পবিত্র সোহবতে এবং সহচার্যে বসে কিছু সংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে ছিলেন। তবে কারা সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, নিষ্ঠুর ইতিহাস আমাদেরকে জানতে দেয়নি। প্রত্নতাত্মিক খননে প্রাপ্ত মোহর থেকে বুঝা যায় ৮১০ শাতাব্দীতেও এ অঞ্চলে বহু মুবালিগ ও বণিকের সমাগম হয়েছে। মাসিক মদীনার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দীন খান অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন— এর চেয়ে দুঃখের কথা কি হতে পারে—যারা আমাদের মুসলমান করেছেন, যারা আমাদের ঈমান—আক্বিদা ঠিক করেছেন, যারা আমাদের আমল—আখলাকের শিক্ষা দিয়েছেন, যারা বিরুদ্ধ শক্তির মোকাবিলায় রক্ত দিয়েছেন, অসহনীয় পরিবেশে জীবন অতিবাহিত করেছেন—এখন তাদের কথা আমরা স্মরণ করতে পারছিনা। এটা কত দূর্ভাগ্যের কথা, তা ব্যক্ত করার ভাষা আমার জানা নেই। এর পর ঐতিহাসিকদের কারসাজিতে আমরা প্রায় দু’শত বছরের কোন ইতিহাস জানিনা। এ দু’শত বছর যারা ইসলামের খেদমত করেছেন তাদের ব্যাপারে ইতিহাস নিরব। তবে কিছু সংখ্যক মুবালিগ ওলী—আলাহ গণের ব্যাপারে ইতিহাস নিরব থাকতে পারেনি।
“অ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ংঁভরুঁহ রহ ইবহমধষ” গ্রন্থে ডঃ এনামুল হক ইসায়ী ১০৪৭ সানের একটা ঘটনা এভাবে উপস্থাপন করছেন—মধ্য এশিয়ার বলখের রাজা শাহ মুহাম্মদ সুলতান বলখী (রহঃ) রাজ্য শাসন ত্যাগ করে দিমাসক এসে তাওফীক নামক একজন সূফী ওলী—আলাহর সান্নিধ্যে থাকেন বহু বছর। ঐ সূফী ব্যক্তি তাকে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারে উৎসাহিত করেন। বিশেষ কারামতে শাহ মুহাম্মদ সুলতান বলখী নৌপথে সন্দীপ পৌছন। অতঃপর তিনি নৌপথে হিন্দু রাজা বলরামের রাজ্যে হরিরাম নগর আসেন। সম্ভবত মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর—ই সেই কালের হরিরাম নগর। রাজা বলরাম এজন মুসলিম দরবেশের উপস্থিতি বরদাশত করতে প্রস্তুত ছিলেন না। তাই তিনি তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে শাহ মুহাম্মদ সুলতান বলখী (রহঃ) ও সঙ্গীদের উপর হামলা করেন। এতে শাহ্ মুহাম্মদ সুলতান বলখী (রহঃ) আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। ফলে সংঘর্ষে হিন্দু রাজা বলরাম নিহত হয়। রাজার মন্ত্রী ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত শাহ্ মুহাম্মদ সুলতান বলখী (রহঃ) নিজে সিংহাসনে না বসে এই নও মুসলিম মন্ত্রীকে সিংহাসনে বসান। উলেখ্য আলাহর ওলীগণ পাক ভারত উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজ্য ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করতে চাননি, বরং শাসকদেরকে হেদায়েত করেছেন যুগে যুগে।
এরপর তিনি পরশুরামের রাজ্য (বগুড়ায়) মহাস্থানে আসেন। রাজার বোন শিলাদেবী তন্ত্র মন্ত্র প্রয়োগ করে হযরত বলখী (রহঃ) ও সঙ্গীদের স্বশস্ত্র আক্রমন চালান। যুদ্ধে রাজা নিহত হন। পরে শিলাদেবী করতোয়া নদীতে ঝাপ দিয়ে মৃত্যু বরণ করে। রাজকুমারী রত্নমনি বন্দী হন। মুসলমানদের আচরণে মুগ্ধ হয়ে ইসলামকবুল করেন। রাজার সেনাপতিও ইসলাম গ্রহণ করেন। সেনাপতি মুরখাব এবং রত্নমনির সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন এই মহান ওলী শাহ্ মুহাম্মদ সুলতান বলখী (রহঃ)। এভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ঈসায়ী একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলায় এসেছিলেন শাহ্ মুহাম্মদ সুলতান রুমী (রহঃ)। ঈসায়ী দ্বাদশ শতকের গোড়ার দিকে বিক্রমপুরে (মুন্সিগঞ্জ) এসেছিলেন শাহ্ আদম (রহঃ) নামক একজন মুবালিগ। ঈসায়ী দ্বাদশ শতকের শেষের দিকে রাজশাহী এসেছিলেন শাহ মাখদুম রূপোশ (রহঃ)। এভাবে শাহ জালাল ইয়ামনী (রহঃ) খাজা খান জাহান আলী (রহঃ) প্রমূখ আলাহর ওলীগণ বাংলাদেশে ইসলাম সু—প্রতিষ্ঠিত করেন।
আমরা যদি ইতিহাসের পাতা থেকে সুক্ষ্ম বিশেষণ করি, তাহলে দেখতে পারি বাংলাদেশ তথা পাক ভারত উপমহাদেশে ইসলাম কোন রাজা বাদশা কিংবা সম্রাটের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইতিহাস স্বাক্ষী—৭১২ ঈসায়ী সনে মুহাম্মদ ইবনে কাসিম এ উপমহাদেশে অভিযান করেছিলেন। এ মহান সিপাহসালার মুহাম্মদ ইবনে কাসিম এর পথ ধরে প্রায় তিনশত বছর পর গজনীর সুলতান মাহমুদ ১০০০ সালে একাধিক বার সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। সফল বিজেতা সুলতান মাহমুদের আর্দশে উদ্বদ্ধহয়ে প্রায় দু’শত বছর পর ১১৯১ সালে ভারত বর্ষে। অভিযান করেন মইজউদ্দীন মুহাম্মদ ঘুরী। কিন্তু ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়লেন ঘুরী। ঐ সময় যারা ভারতবর্ষে জীবন বাজি রাখছিলেন তারা ব্যর্থ মইজউদ্দীন মুহাম্মদ ঘুরী কে এভাবে অভয় বানী শুনালেনঃ আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করতে এসো তবে গজনীর সুলতান মাহমুদের মত সফল বিজয়ী হিসেবে যেতে নয়। আমরা আলাহকে হাজির নাজির জেনে আশ্বাস দিচ্ছি জীবন দিব, সাথে থাকব, এবং আলাহর উপর আস্থা রেখে বলছি তুমি যদি কথা রাখ তাহলে ইনশাআলাহ এই ভারত বর্ষের অত্যাচারী শাসক পৃথিবীরাজ কে অবস্থায় তোমাদের হাতে তুলে দিব। এর বিনিময় তোমার কাছে কিছু চাইব না এবং পাবার আশাও করিনি, আমরা ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিতে বিশ্বাস করিনা, আমরা গদি চাই না, আমরা চাই আলাহর জমিনে আলাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে। আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন এ আহ্বান কারী কে? এ আহবানকারী হচ্ছেন, ওলীকুল শিরোমণি ভারত বর্ষে ইসলাম প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত সুলতানুল হিন্দু খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমিরী (রহঃ) এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে রাজা বাদশা সম্রাট, সুলতান গণ কী করেছেন। এদের কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে, ঐ লেখাই সাক্ষী। এরা ক্ষমতা পেয়েছেন। ক্ষমতা প্রসঙ্গে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ম্যাকাই ভেলী সুন্দর করে বলেছেন ক্ষমতা মানুষকে কলুষিত করে। বেশী ক্ষমতা মানুষকে বেশী বেশী কলুষিত করে। সুতরাং ভারতবর্ষের রাজা বাদশাগণ ক্ষমতা ভোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, বিশাল ভারত বর্ষের ইসলামী সাম্রাজ্যর স্থায়ী আসনের মূলে কুঠারাঘাত করে তছনছ করে দিয়েছেন। যার ফলশ্র“তিতে বাদশার জাতি মুসলমান ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত হল। চরম বিপর্জয়ে ধনে মানে দুর্দশায় পতিত হলো, শিক্ষা দীক্ষায় তারা যেমন অধঃপতনের প্রান্ত সীমায় উপণিত হলো, তেমনি তাহজীব তামাদ্দুন আকিদা বিশ্বাস, আমল আখলাকে নিমজ্জিত ঘোর অন্ধকারে হাবুডুবু খেতে থাকলে শিরক বিদয়াত আর কুসংস্কারে তারা ভূলে গেল। নিজেদের ঐতিহ্য নিজেদের গৌরব, নিজেদের মর্যাদা, নিজেদের সত্যিকারের পরিচয়। পরিণত হল গোলামের গোলাম তষ্য গোলামে। এঘোর নিকষ কালো অন্ধকারের দুর্দিনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে কর্জন সমাজ সংস্কারের আগমন ঘটে ছিল তারা হচ্ছেন ফুরফুরা শরীফের মুজাদ্দিদে জামান মাওলানা শাহ মুহাম্মদ আব্দুলাহ ওরফে আবুবকর সিদ্দীক ফুরফুরাভী (রহঃ) জৈনপুরের হযরত কারামত আলী (রহঃ)। আর বাংলা আসামের শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ছারছীনা শরীফের শাহসূফী মাওলানা শাহ নেছারুদ্দীন আহমদ (রহঃ) ও শাহ্ আবু জা’ফর মুহাম্মদ ছালেহ (রহঃ) এভাবেই প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশ তথা পাক ভারত উপমহাদেশে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কবি রহুল আমীন তাই লিখেছেন—
লাখো শহীদের রক্তের দান
মোদের বাংলাদেশ,
পীর আওলিয়া, শহীদ, গাজারী
স্বদেশ বাংলাদেশ।
এই দেশ পীর খান জাহানের,
শাহ সুলতান শাহ জালালের,
শাহ মাখদুম নেছারুদ্দীন,
আবু জা’ফরের দেশ।
পীর আউলিয়া,——————
এদেশের লাগি কত শত বীর,
ঢেলেছে তাদের তপ্তরুধীর,
লড়াই করিয়া শত তিতুমীর,
জীবন করেছে শেষ।
পরিশেষে একথাই বলব ওলী আলাহগণ শুধু ভারত বর্ষে নয়, গোটা বিশ্বের আনাচে কানাচে ইসলামের ঝান্ডা উড্ডীন করেছেন। এসম্পর্কে বৃটিশ প্রাচ্যবিদ (ড়ীরবহঃ ঃধষরংঃ) ইমাস অরমোলড (ঞ. অৎড়হড়ষফ) তার প্রখ্যাত গ্রন্থঃ ঞযব চৎবধপযরহম ড়ভ রংষধস— এ বলেন সুফী সাধকের (আলাহর ওলীগণের) মাধ্যমে বিশেষ করে ফিলিস্তীন দ্বীপপুঞ্জে, ভারত মহাসাগরের আশে পাশে, ও ও আফ্রিকায় ইসলামের দাওয়াত পৌছেছে।
Add Comment