মাকে নিয়ে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত অলি হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালের পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তা নিজেরা না এলে বুঝতাম না। আইসিইউ নাই বলে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।’
গতকাল বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপর করোনা শনাক্ত বা করোনার উপসর্গযুক্ত রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসছে। দেড় ঘণ্টায় হাসপাতালে এমন রোগী আসেন ৮ জন। তাঁদের মধ্যে চারজনকে ভর্তি করা হয়। আর চারজনকে ফেরত পাঠানো হয়।
ফিরে যাওয়া রোগীদের একজন সাভারের মোহাম্মদ হোসেন আলী। শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেওয়ায় প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনা ধরা পড়ে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকেরা তাঁকে আইসিইউ সুবিধা আছে, এমন হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। পরে আনা হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। তাঁর ছেলে আনোয়ার হোসেন বলেন, আইসিইউ ফাঁকা নেই, তাই এখানে তাঁর বাবাকে ভর্তি করানো যায়নি।
গতকাল সকালে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত আবদুল মান্নানকে। দুপুরের দিকে তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যা তীব্র হয়ে ওঠে। এ সময় তাঁর জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু হাসপাতালে এই সেবা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি (জরুরি অক্সিজেন দরকার এমন রোগী বেশি) তখন না থাকায় স্বজনেরা দ্রুত তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান।
রাজধানীতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালে একটি শয্যা পেতে এখন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। ফাঁকা শয্যার আশায় রোগীকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে স্বজনদের। রোগীর অক্সিজেনের চাহিদা থাকলে তাঁকে ভর্তি করাতে বেগ বেশি পেতে হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেনের (৬৫) শ্বাসকষ্ট। তাঁর পরিবার গতকাল সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করাতে না পেরে জাকিরকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। কিছুক্ষণ ছোটাছুটি করেও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেননি।
জাকির হোসেনের ছোট ছেলে মাহফুজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল আটটায় রওনা দিয়েছি। দুই সিলিন্ডার অক্সিজেন ছিল অ্যাম্বুলেন্সে। এক সিলিন্ডার শেষ। আরেক সিলিন্ডার যেকোনো সময় শেষ হয়ে যাবে। অক্সিজেন লাগবে বলে হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছে না।’ পরে এক স্বজনের সঙ্গে ফোনে পরামর্শ করে তাঁরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছোটেন কুর্মিটোলা হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ১৬টি। এগুলোর মধ্যে ৩টি হাসপাতালে আইসিইউ নেই। বাকি ১৩টি হাসপাতালের মধ্যে ৮টিতেই গতকাল কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল না। বাকি ৫টি হাসপাতালে ফাঁকা ছিল ১৬টি আইসিইউ।
Add Comment