হেপাটাইটিস সি ভাইরাস একটি মারাত্মক রোগ। পৃথিবীতে বর্তমানে সাত কোটি ১০ লাখের বেশি হেপাটাইটিস সি রোগী রয়েছে বলে ধারণা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সঠিক সময়ে এ রোগ শনাক্ত এবং চিকিৎসা না হলে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সার হতে পারে। এখনও এই রোগের কোনো টীকা আবিষ্কার হয়নি।
মানুষ যেভাবে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত এটা রক্ত এবং রক্তের উপাদানবাহিত হয়ে মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম বলেন, রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে অনেক সময় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। ফলে এখন রক্ত দেয়ার সময় হেপাটাইটিস বি, সি পরীক্ষা করে দেখে নেয়া উচিত।
তিনি বলেন, অনেক সময় এই রোগের তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। রক্ত পরীক্ষার পরেই কেবল হেপাটাইটিস সি ধরা পড়ে।
যেভাবে হতে শরীরে প্রবেশ করতে পারে হেপাটাইসি সি:
# স্ক্রিনিং ছাড়া রক্ত-রক্তজাত সামগ্রী পরিসঞ্চালন। একই ইনজেকশন বহুবার ব্যবহার।
# নাক-কান ছিদ্র করার সময়েও রক্তের সংস্পর্শে এসে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
# মাদক নেয়ার সময় এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
# অরক্ষিত যৌন মিলন ও সমকামিতা।
# শিশুর জন্মের সময় মায়ের হেপাটাইটিস থাকলে।
# এইচআইভির রোগী ও কারাগারে থাকা ব্যক্তিরা।
# ট্যাটু করার মাধ্যমে
হেপাটাইটিস সি’র উপসর্গ :
হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন উপসর্গ দেখা দেয় না। এমনো হয় এর উপসর্গ বুঝতে আট-দশ বছর সময় লেগে যায়। এর ফলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তবে, কিছু উপসর্গ রয়েছে তা দেখা দিলে অবশ্যই অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি হেপাটাইটিস পরীক্ষা করাতে হবে।
জ্বর, দুর্বলতা ও অবসাদ, খাবারে অরুচি, বমিবমি ভাব, ক্লান্তি বোধ হওয়া, জন্ডিস হওয়া ও পেটে পানি আসা।
হেপাটাইটিস সি’র চিকিৎসা :
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অনেকে এমনিতেও সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে অনেক দিন আক্রান্ত থাকলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমানে হেপাটাইটিস সি রোগের চিকিৎসায় বেশ কিছু ভালো ওষুধ তৈরি হয়েছে। মুখে খাওয়া এসব ওষুধ ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকরী।
তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত হলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া সিরোসিসের প্রাথমিক দিকেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে ক্যান্সার হয়ে গেলে তখন এই ওষুধ খুব বেশি কাজ করে না। এসব ওষুধ বেশ ব্যয়বহুল।
হেপাটাইটিস-বি’র টিকা বেশ কার্যকরী বলে প্রমাণিত হলেও এখনও হেপাটাইটিস-সির কোনো টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।
Add Comment