রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মারের মধ্যে বাগবিতণ্ডার ঘটনা নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের রেজিস্ট্রারের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার একটি ভিডিও রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সভা করছিলেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম। পরে সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সভা করছেন অভিযোগ তুলে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন সালাহউদ্দিন আম্মার। সেখানে তাঁরা একপর্যায়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হকের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন বিভাগটির শিক্ষার্থীর। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ওই শিক্ষকের অব্যাহতির চিঠিতে সই করেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। চিঠিটি রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে গতকাল ওই বিভাগে পাঠানোর কথা ছিল। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ফলাফলের অগ্রগতি না পাওয়ায় রাকসু নেতাদের কাছে যান। জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বিষয়টি নিয়ে গতকাল দুপুরে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলতে যান। সেখানে আম্মারকে জানানো হয় রেজিস্ট্রার ‘মহানগর বিএনপির’ নেতাদের সঙ্গে সভা করছেন। বিষয়টি শুনে সভাকক্ষে অনুমতি ছাড়াই ঢোকেন সালাহউদ্দিন।
ভিডিওতে দেখা যায়, সালাহউদ্দিন আম্মার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি স্যার ভেতরে আসব না?’ জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘তোমাকে আমি বাইরে ১০ মিনিট ওয়েট (অপেক্ষা) করতে বলেছি।’ এরপর আম্মার বলেন, ‘আপনি স্যার চিঠি (চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিকে অপসারণের চিঠি) আটকে রাখছেন।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘এই বেয়াদব ছেলে, কীসের চিঠি আটকে রাখছি আমি?’ তখন আম্মার বলেন, ‘বেয়াদব তো আমি। ডেফিনেটলি বেয়াদব।’ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমার সঙ্গে বেয়াদবি কেন? তুমি কে ওই ডিপার্টমেন্টের? তখন সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি কে মানে? আমি রাকসুর নির্বাচিত জিএস।’
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, রেজিস্ট্রার প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং সেদিনও তাঁকে বারবার ‘গেট আউট’ বলে চিৎকার করেন। দায়িত্বের জায়গা থেকে তিনি ঘটনাটি যাচাই করতে গিয়েছিলেন, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়।
অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম বলেন, ওই সময় সালাহউদ্দিন আম্মার অনুমতি ছাড়াই তাঁর দপ্তরে ঢুকে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে সভাপতি নিয়োগপ্রক্রিয়া তখন চলমান ছিল, কোনো ফাইল আটকে রাখা হয়নি। শিক্ষার্থীসংক্রান্ত বিষয় হলে রাকসুর নেতারা আসতে পারেন; কিন্তু প্রশাসনিক নিয়োগ নিয়ে তাঁদের হস্তক্ষেপ করাটা অনুচিত।
এ ঘটনায় নিজেদের অবস্থান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সালাহউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্ট্রার স্যারের বাগ্বিতণ্ডার সময় সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতৃত্ব উপস্থিত ছিল। আমরা শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম; কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের বিএনপির কর্মী ভেবে ভুল তথ্য দেন, এখান থেকেই ভুল–বোঝাবুঝি শুরু।’
এনসিপি নেতাদের সঙ্গে রেজিস্ট্রারের সভাকে বিএনপিকে জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ (রাহী)। তিনি বলেন, ‘রেজিস্ট্রার অফিসে আম্মার ও শিক্ষক পরস্পরকে ধমকাচ্ছেন, অথচ বিএনপির নাম টেনে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। এনসিপির সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায় আম্মারকে, অথচ এখন তিনি তাঁদের চেনেন না।’
বিষয়টি নিয়ে রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে তাঁদের এ আচরণ পরিবর্তন হওয়াটা সমীচীন ছিল; কিন্তু এখনো প্রশাসনের কারও কারও আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা রাকসুর প্রতিনিধি নির্বাচিত করে তাঁদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন। এ জন্য তাঁরা যেমন শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খ্যাপা, তেমনি তাঁদের প্রতিনিধিদের ব্যাপারেও।’










Add Comment