প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ায় দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসীরা গত আগস্ট মাস থেকে বৈধ চ্যানেলে বেশি পরিমাণ আয় পাঠাচ্ছেন। তাতে এ খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় হ্রাস পাওয়া ও বাড়তি বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতির ফলে বহিস্থ খাতে কিছুটা স্বস্তি মিলছে। সব মিলিয়ে বিনিময় হারে একধরনের স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে বলে আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যমূল্য ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এতে বাংলাদেশে আমদানি খরচ বেড়ে যায়, শুরু হয় ডলারের সংকট। ডলারের এই সংকটে ওলট–পালট হয়ে যায় দেশের প্রায় সব আর্থিক সূচক। ব্যবসা–বাণিজ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংকট মোকাবিলায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একসময়ের ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। একপর্যায়ে প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ১৩ বিলিয়ন ডলারে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। বাড়তে থাকে প্রবাসী আয়। আমদানিও কিছুটা কমে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল হতে শুরু করে। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পতন থেমেছে। ব্যাংকে এখন ডলার ১২০ টাকা ও খোলাবাজারে ১২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সরকারি পরিসংখ্যানে মূল্যস্ফীতি কমে এলেও মুরগি, ডিম ও সব ধরনের সবজি উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে মানুষের কষ্ট বেড়েছে।
বেড়েছে প্রবাসী আয়, কমেছে আমদানি ও রপ্তানি
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত সেপ্টেম্বরে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে প্রবাসীরা ৮০ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। এর আগে আগস্টেও দেশে এসেছিল ২২২ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়। চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে ৯৯ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে যে অর্থ আসে, তার পুরোটাই প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রায় আয় ও তাৎক্ষণিক তা দেশে আসে। প্রবাসী আয়ের অর্থে আমদানি দায়সহ বিভিন্ন খরচ মেটানো হয়।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ৩৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৩২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় গত মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ। গত জুলাইয়ে ৩৮২ ও আগস্টে ৪০৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তখন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৩ ও ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১ হাজার ১৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি।
ডলার নিয়ে অস্থিতিশীল যে পরিস্থিতি ছিল, তা কেটে গেছে। আগের মতো দাম নিয়েও তেমন হইচই নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোর কিছু বকেয়া বিল এখনো রয়ে গেছে। এ জন্য ডলারের দাম ১২০ টাকার ওপরে উঠেছে
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮১ কোটি ডলার। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এ ছাড়া গত জুলাই-আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছে।
Add Comment