শীর্ষ সংবাদ

রাষ্ট্রনৈতিক অগ্রাধিকার ধাপ: আংটি-আংগুল খাপে-খাপ

প্রফেসর ড. মো. সদরুল আমিন

এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন- আংগুলের চাহিদামত আংটি বানাবো নাকি বাইরে থেকে এনে একটি সুন্দর আংটির ভিতরে নিজের যে কোন একটি আংগুল কেটে-ছেঁটে তেল-সাবান দিয়ে মুচড়িয়ে ঢুকিয়ে দিব। বলা বাহুল্য দ্বিতীয়টি ্সথায়ীত্বশীলতা পাবে না। এই বিষয়টি আমরা কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে ব্যবহার করতাম। অর্থাৎ বাইরে থেকে আমদানি করা অনুপযুক্ত কৃষি প্রযুক্তি কৃষকবান্ধব হয়না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রনৈতিক সকল ক্ষেত্রে এই প্রবাদটির বাস্তবতা রয়েছে। এখানে কয়েকটি কর্ম ধাপে বিষয়টি আলোচনা করা হল।

১. প্রথম ধাপ- গর্ত-পেরেক সমন্বয়, গোল গর্তে চৌকা পেরেক নয়”:   দেশের বর্তমান উপদেষ্টা সরকার প্রথমেই একজন সম্মানিত সাবেক সেনাপ্রধানকে তাঁর বিরাটকায় মূল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে আরেক সুবিশাল ৬০% মানুষকে সেবাদানকারী কৃষি মন্ত্রণালয়কে ধরিয়ে দেওয়া হল। বন্দুকচৌকো গর্তে গোল পেরেক । বন্দুক থেকে লাংগল। পেরেক লাগে  না,  ঢিলা।   তাতে বুঝা গিয়েছিল মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা হয়ত দেশে উৎপাদনের চেয়ে বিদেশ থেকে বিশেষ বিশেষ পণ্য আমদানীর সিদ্ধান্তসমুহ মেনে নিয়েছেন। কৃষি যন্ত্রপাতির ভর্তূকি স্থগিত করেছেন।

২. দ্বিতীয় ধাপ: যার কাজ তার সাজে” ঠিক করার পর  দেশের তথ্য ও অসত্য নীতি-পদ্ধতির ছড়াছড়ি” বন্ধ করা- দেশের খবরও নীতি-পদ্ধতি এমন সতর্ক ভাষায়   বলতে হবে যাতে কেউ প্রকৃত তথ্যটি খুজেঁ না পায় বা বুঝতে-ধরতে না পারে। যেমন- সকলের সাথে রহস্যাবৃত রাজদলীয় ও আন্ত:দেশীয় সম্পর্ক, নির্বাচনের তারিখ? কিন্তু এর শেষরক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা অনুপাত ৫০:৫০। একদিকে জামায়াত, এনসিপি ও বামদল সমুহ (বিলম্বিত নির্বাচনের পক্ষে মিত্রশক্তি) এবং অপরদিকে বিএনপি, প্রতিরক্ষা প্রশাসন ও অনেক ব্যবসায়ী (দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে অক্ষশক্তি)। একজনের হাতে বিদেশী সংস্কারমান আংটি, অন্যপক্ষ বিয়ের আসরে আংগুল বাড়িয়ে। এজন্য আংটি ও আংগুলের আকার পার্থক্য ও দূরত্ব উপদেষ্টা কর্তৃক কমাতে হবে। বিএনপি’র দৃঢ় শৃংখলা ইমেজ গড়তে হবে। বিধি মোতাবেক বিএনপি’র রেগুলার সভাপতি নির্বাচন করতে হবে। যাহোক, তথ্য-নীতি- পদ্ধতি নিয়ে লুকোচুরি করে আর কোন লাভ হবে না। তবে মিত্রশক্তির দল গুছানোর জন্য নির্বাচন বিলম্বিতকরণ বা অক্ষশক্তির চাপে দ্রুত যেন-তেন নির্বাচন কোনটাতেই সাধারণ মানুষের স্বস্থি নাই। যা তুলনামূলক ভাল হতে পারে তা হলো সরকারের হাত দেশীয় বিশেষজ্ঞসহ  নির্বাচন কমিশনের দিকে কার্যকরভাবে সম্প্রসারিত করা।

৩. তৃতীয় ধাপ: জানিয়ে দেওয়া যে সংসদ সদস্যে অন্যতম কাজ আইন প্রণয়ন ও মূল্যায়ণ: সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংশ্লিষ্ট কাজ হল সংসদ সদস্যগণকে শুল্কমুক্ত সুবিধা-কোটা ও প্রশাসনিক তাবেদারী বন্ধ করে তাদের মূল চার্টার (আইন-বিধি) মনে করিয়ে দেওয়া। এতে নির্বাচনী হাংগামা অনেক কমে যাবে। সুন্দরী মহিলারা সবার ভাবী হয়ে যায়। অতি সুযোগ-সুবিধার মোড়কে সংসদ সদস্যকে এত সুন্দরী বানানো সঠিক নয়। আংগুলকে স্বীয় আংটির চেয়ে মোটা হয়ে কলা গাছ হতে দেওয়া যাবে না। সরকারের কথা সরকারের উপদেষ্টাগণের নিজের মুখে ও প্রজ্ঞাপনভিত্তিক বলতে হবে। কোন মূখপাত্র বা সামাজিক মেডিয়ার পর্যালোচনার মন্তব্য-স্ট্যাটাস কার্যকর মানের বলে গণ্য করা যাবে না।

৪. চতুর্থ ধাপ -অনৈতিকতা জনিত ট্রমা পূনর্বাসন : ইদানীং সবাই ট্রমাগ্রস্থ হিসাবে পুলিশকে টার্গেট করে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কেবল পুলিশ নয় দেশের অন্তত: পঞ্চাশোর্ধ ৫০% শিক্ষিত কর্মকর্তা মানুষ ”ষোলোবছরী” দোষণে অবক্ষয়িত হয়ে নৈতিকভাবে পংগু হয়ে আছে, তাদের সকলের পুনর্বাসন অত্যাবশ্যক। তবে কৃষক সহ দেশের অধিকাংশ (বর্তমানে প্রায় ৬০% তুলনামূলক নিরপেক্ষ ভোটার) গ্রামের কম শিক্ষিত গরীব মানুষ ”ষোলোবছরী” দোষণে কম প্রভাবিত হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক লুটেরা, ভুমিদস্যূ, বিদ্যুৎ-জ্বালানী ও মেডিকেল প্রকল্পক, সাংবাদিক, বিচারক, অধ্যাপক ও আমলাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নৈতিক পংগুত্ব দূর না করে তাদের অবশ্যই কোন দায়িত্বে রাখা যাবে না।

৫. প্ঞ্চম ধাপ: পিআর ও রাজনীতি নিবন্ধন: বর্তমানের সকল রাজনৈতিক দল (প্রস্তাবক জামায়াতসহ) সরাসরি প্রার্থী ভোট পদ্ধতির জন্য নিবন্ধিত। এখন পিআর পদ্ধতি অবল¤বন করতে হলে দলের গঠনতন্ত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি উল্লেখ করে পুনরায় সাংবিধানিকভাবে রাজনেতিক দল অনুমোদিত হতে হবে। সে সুযোগ বর্তমানে কম । অনেক সুধি বলেন দেশে রাজনৈতিক দল বন্ধ করে দেওয়া গণতন্ত্র বিরোধী। কিন্তু কথা হল একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন দেওয়ার সময় ” কি করলে কি হবে ” তা লেখা থাকে। সেটা কার্যকর করলেই হয়। আলাদাভাবে বা নূতনভাবে রাজিৈতক দল নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হয় না।

সব শেষে বলব আমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছি তা প্রধানত: সন্মূখ ছাত্র’ জুলাই আন্দোলনকারী এবং ড. ইউনুস প্রশাসনের কার্যকারণ প্রভাবে। তাই নির্বাচন কার্যক্রম প্রশ্নে দেশীয় আংটি-আংগুলের (রিং ফিংগার) সঠিক মাপে দেশীয় বিশেষজ্ঞদ্বারা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আংটি তৈরী করে নিতে দিন। সাথে সাথে উপদেষ্টা সরকারের অত্যাবশ্যক এরকম একটি জনআস্থা ইমেজ তৈরী করতে হবে যে তারা একটি সঠিক নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, যত দ্রুত সম্ভব। এতে লুকোচুরির অবকাশ নাই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০