মিজান মানিক, সাংবাদিক ::
“দাদা, খেয়ে আসছেন না গিয়ে খাবেন?” ইন্ডিয়ার লোকদের প্রতি সাধারণের কাছে কথিত ভ্রান্ত ধারণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হলো সেদিন। আমরা সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস মুভমেন্ট-সিএইচআরএম সদস্যরা যখন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগতলায় একটা আন্তর্জাতিক সেমিনারে পৌঁছালাম। ইমেগ্রেশন জটিলতা কাটিয়ে রাজ্যে প্রবেশ যখন। তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে সাতটা বেজেছিল। এদিকে সাংবাদিক মোশাহিদ আলী ও অধ্যাপক ড. মুজাহিদ রহমানের নেতৃত্বে টিম আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে বন্দরে দীর্ঘ অপেক্ষা তার।
আমাদের লায়ন ড. মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদের নেতৃত্বে আমরা প্রথমে আগরতলা প্রেসক্লাবের সেমিনার কক্ষে পৌঁছলাম। সেখানেও দীর্ঘ অপেক্ষায় বন্ধুপ্রতিম দেশের সফরকারী ভাইবোনদের অভ্যর্থনা জানাতে ড. দেবব্রত দেব রায়ের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক দল। শুরু হয় একই ভাষাভাষী ‘আত্মীয়দের’ বরণ করে নেয়ার পর্ব। ফুলেল শুভেচ্ছা, উত্তরীয় পরিয়ে, লাল গোলাপের ফুল, ক্রেস্ট প্রদান ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে গ্রহণ অনুষ্ঠানটি ঐতিহ্য হয়ে আছে। দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনায় ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমরা বাকরুদ্ধ ছিলোম। এখানেই শেষ নয়, ভারতীয়দের আপ্যায়ণ ব্যবস্থাপনায় আমাদের মুগ্ধ ও ঋদ্ধ করেছে। আয়োজকদের কন্ঠে উচ্চারিত হলো, ‘আজকের রাতে আপনারা আমাদের মেহমান।’ তারা অভিযাত্রীদলের তেতত্রিশ জনকেই আলাদা করে গিফট বক্স তুলে দেন। তাতে উপহারসামগ্রী সহ ছিল রাতের পর্যাপ্ত খাবার ও মিষ্টান্ন। একজনের খাবার দিয়ে দুইজন করে অনায়াসে খাওয়া যেতো।
পরের দিন : আমাদের ডিনার ছিল ‘‘জান্নাত রেস্তোরায়’’। আমরা সকলে যথা রীতি সেখানে পৌছে গেলাম। রাত ৯টা বাজে। কবিতা পাঠের আসর। সংস্থার চেয়ারম্যান এডভোকেট ড. মো: জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগত কাজ থাকায় আসতে পারেনি, তাকে যে সংস্থার কর্মীগণ ভুলতে পারে না। মুজাহিদ ভাই ভাস্যুায়ালী সংযোগ করে-কবিতা পাঠের আসর শুরু করেন-‘‘যেটা সারা জীবন জীবনে মনে থাকব ‘’।
বিদায় বেলার কথা না বললেই যেন বাদ থেকে যায় ‘‘আমাদের সকাল ৯.৩০ মিনিটে গাড়ী যাবার কথা ছিল-কেন জানি না কি কারনে আমাদের টীম প্রধান লায়ন ড. মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ ভাই দেরী করছিলেন-আমরা আগেই পৌছে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই-আমাদের বিদায় দেবার জন্য অধ্যাপক ড.মুজাহিদ স্যার বাস স্ট্যান্ডে এসে বসে আছেন। তিনি ৯.০০ টায় আগে এখানে এসেছেন। এখন ১১.৩০ মিনিট তবুও মুজাহিদ আসছে না। যখন আসলেন-আমাদের মাঝে শিহরন জাগল! আমরা সবাই গাড়ী উঠলাম-গাড়ী ছাড়বে সময় প্রায় ১২ টা (সকাল নয়টা থেকে যে মানুষটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, সবাইকে দিয়ে প্রিয় বন্ধুদের বিদায় দেয়টা হয়ত তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না, তাই তো চোখে অশ্রু-আমাদের মুজাহিদ ভাই চোখ এড়াতে পারেনি, গাড়ী থামিয়ে নেমে দুজন-দুজনা জড়িয়ে ধরলেন-গাড়ীর সকলে বাক রুদ্ধ————–। আমাদের বন্ধুত্ব থাকে যেন অমালিন।
Add Comment