বহু বছর ধরে ভারতের সবচেয়ে প্রিয় বিদেশি অতিথিদের অন্যতম হলেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই থাকুন বা বিরোধী নেত্রী, কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে চরম বিপদের মুহুর্তে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী – বিগত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে দিল্লির দরজা তার জন্য সব সময় অবারিত থেকেছে। সেটা ইন্দিরা গান্ধীর জমানাতে যেমন, তেমনি বাজপেয়ী-মনমোহন সিং বা নরেন্দ্র মোদীর আমলেও। মরিক বিমান দিল্লির উপকণ্ঠে অবতরণ করার পর যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য দিল্লি একেবারেই প্রস্তুত ছিল না।
বস্তুত এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি ভারত সরকারকে এতটাই অপ্রস্তুত ও হতচকিত করেছে যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক একটি বিবৃতি দিতেও তারা চব্বিশ ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়েছে। অথচ এই সময় পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছিল, যেখানে সরকার প্রতিটি ছোটবড় ঘটনা নিয়ে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে।
সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে ক্যাবিনেটের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করতে জরুরি বৈঠকেও বসেছিল – সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-সহ সিনিয়র কর্মকর্তারা সবাই উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ নিয়ে ভারত ঠিক কী করবে, ওই বৈঠকে সে ব্যাপারেও কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
এমন কী বিবিসি জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনা যতটুকু সময়ই দিল্লিতে থাকুন – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সঙ্গে প্রকাশ্যে সাক্ষাৎ করবেন কি না অথবা করলেও সেই বৈঠকের কথা প্রকাশ করা হবে কি না, সে ব্যাপারেও এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ওঠা যায়নি। অথচ শেখ হাসিনা নিজে এই দেখা করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
দিল্লিতে একাধিক পর্যবেক্ষক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে এই পরিস্থিতি ভারত সরকারকে একটা ‘ক্যাচ টোয়েন্টি টু সিচুয়েশন’ বা চরম উভয় সংকটে ফেলে দিয়েছে, এ কথা মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে।
আর এই বিপদটা আসছে দু’দিক থেকে – এক, ব্যক্তি শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে দিল্লি কী পদক্ষেপ নেবে আর দুই, বাংলাদেশের ভেতরে যা ঘটছে সেটাকেই বা দিল্লি কীভাবে অ্যাড্রেস করবে।
Add Comment