২০২১ সাল। মিয়ানমারের সাংবাদিকরা সামরিক অভ্যুত্থানের কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে তাদের জীবন বাজি রেখেছেন। কমপক্ষে একজন সাংবাদিক জেলে মারা গেছেন। জেলে ভুগছেন কয়েক ডজন। সাংবাদিকদের কাজ করার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দেশগুলোর অন্যতম এখন মিয়ানমার। ৮ই মার্চ সাংবাদিক নাথান মুয়াং এবং হান্থার নিয়েইন সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে তাদের অফিসে গিয়েছিলেন। তাদের ভয় ছিল সামরিক শাসকরা যেকোনো সময় ঘেরাও দিতে পারে তাদের কামায়ুত মিডিয়া হাউজে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম সেখান থেকে সরাতে চেয়েছিলেন তারা।
মিয়ানমার বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক নাথান মুয়াং বলেন, আমাদের আশঙ্কা ছিল যে, সামরিক জান্তা সন্ধ্যা বা রাতে অফিস ঘেরাও করতে পারে। আমরা যদি আর ৩০ মিনিট সময় পেতাম তাহলে সেখান থেকে সরে যেতে পারতাম। অফিসে প্রবেশ করেই তারা কোনো কিছু বললো না। শুধু আমার নাম ও বয়স জানতে চাইল। ছবি তুললো। আমাদের চোখ বেঁধে ফেললো। নিয়ে গেল সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে। তা চালানো হলো ৩০ মিনিট। এরপরই আমাদের ওপর শুরু হলো নির্যাতন।
নাথান মুয়াং বলেন, নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তার চোখ বেঁধে প্রথম তিন বা চারদিন বেদম প্রহার করে। এ সময়ে তাকে ঘুমাতে বা খেতে দেয়া হতো না। কিন্তু তিনি মার্কিন নাগরিক, এ পরিচয় প্রকাশ হওয়ার পর নির্যাতন কিছুটা কমে আসে। আটদিন পরে খুলে দেয়া হয় চোখের বাঁধন। তাকে পাঠানো হয় ইয়াঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেইন জেলখানায়। সেখানে ৪৪ বছর বয়সী এই সাংবাদিক তিন মাস জেল খাটেন। তারপর তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
এই বড়দিনে ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে সাংবাদিক হান্থার নিয়েইনের। তিনি এখনও বন্দি আছেন। নাথান মুয়াং বলেন, হান্থার নিয়েইন তার ৪০তম জন্মদিন জেলখানায় কাটাচ্ছে এটা দেখে আমি বাস্তবেই এমন আচরণের ঘৃণা জানাই। এ বিষয়টি যেমন আমার জন্য, তেমনি তার পরিবারের জন্য খুবই বেদনার। তার ভাতিজার জন্ম হয়েছে এপ্রিলে। এখনও তার মুখ দেখতে পারেননি তিনি।
এ বছর ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া সামরিক জান্তা কমপক্ষে একশ সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে ছিলেন ওই দু’জন সাংবাদিক। অভ্যুত্থানের পর গণঅসহযোগ আন্দোলনে তছনছ হয়ে গেছে দেশটির অর্থনীতি। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জান্তা সরকার হত্যা করেছে হাজারের বেশি মানুষকে। সব মিলে দেশটিতে সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন সাংবাদিকরা। জান্তা সরকার যেসব মানবাধিকার, মানুষের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করছে সে বিষয়ে তারা তথ্য সরবরাহ করেছেন।
Add Comment