স্বাস্থ্য ও জন সচেতনা

পর্যটক টানতে সুন্দরবন ঘিরে নেওয়া হচ্ছে নানা প্রকল্প

মোংলা প্রতিনিধি ::

সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। তাই পৃথিবীর অনেক পর্যটকের প্রধান আকর্ষণের জায়গা এই সুন্দরবন। সুন্দরবনকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং এখানকার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানা প্রকল্প। প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানে তৈরি করা হবে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কাজ করা হবে। ‘সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন বা ইকো-ট্যুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

 

প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিবেশ সুরক্ষা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করা। এ জন্য সাড়ে ৬ হাজার বর্গমিটারের একটি আরসিসি ফুট ট্রেইল, একটি ইন্টারপ্রিটেশন ও ইনফরমেশন সেন্টার, সাতটি স্যুভেনির শপ নির্মাণ করা হবে। এর জন্য বন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ইকো-ট্যুর অপারেটর, গাইড কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৬০০ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া স্থানীয়দের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিলি করা হবে প্রচারপত্র।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছর থেকে জুন, ২০২২ মেয়াদে সুন্দরবনকে ঘিরে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিতে যাচ্ছে বন অধিদফতর। নতুন এই প্রকল্পের আওতায় সাতটি ফাইবার বডি ট্রলার, তিনটি পন্টুন ও গ্যাংওয়ে, তিন কিলোমিটার আরসিসি সড়ক, ছয়টি পাবলিক টয়লেট, সাড়ে ৮ হাজার ঘনমিটার পুকুর খনন, একটি শেডসহ প্রদর্শনী ম্যাপ, ৩০টি আরসিসি বেঞ্চ নির্মাণ করা হবে। পাঁচটি গাইড ম্যাপ, ২০টি ডাস্টবিন ও পর্যটকদের জন্য ১০টি পথনির্দেশনা তৈরি করা হবে। প্রকল্পটি সুন্দরবনের পশ্চিম ও সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে বাস্তবায়িত হবে।

বন বিভাগের সিএফ (বন সংরক্ষক) মিহির কুমার দো বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র হিসেবে করমজল, হাড়বাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলারচর, হিরনপয়েন্ট, কলাগাছিয়া রয়েছে। ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র সম্প্রসারণের জন্য সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে আন্দারমানিক ও শরণখোলা এবং সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগে শেখেরটেক মন্দির রয়েছে। এ ছাড়া সুতারখালী এলাকার কৈলাশগঞ্জ ও কলাবগী এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন চারটিসহ মোট ১১টি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আওতাভুক্ত। ব্যবস্থাপনা কমিটির আওতায় ৩৪ হাজার গ্রাম সংরক্ষণ দলের সদস্য রয়েছে। কমিটিকে সম্পৃক্ত করে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে বনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো হবে।

এ বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের সম্পদের ওপর চাপ কমানো ও স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। পর্যটনের বিকাশ হলে স্থানীয়রা ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ছেড়ে দেবেন। ফলে সুন্দরবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমবে। পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার করা হবে। প্রতিবেশ, পরিবেশ ঠিক রেখে ঝুলন্ত ব্রিজসহ অন্য অবকাঠামোও গড়ে তোলা হবে।

সুন্দরবন বিভাগের করমজল পর্যটন স্পটের ওসি হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত সুন্দরবন। বিশ্বের ৩৫টি দেশে বড় বড় নদীর মোহনায় এমন বন রয়েছে। যার মধ্যে আমাদের সুন্দরবন সবচেয়ে বড়। তাই সুন্দরবনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বলা হয়। আর এ কারণে সুন্দরবন বিশ্বের অনেক পর্যটকের প্রধান আকর্ষণের জায়গা।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ আছে তাদের আয়ের একমাত্র উৎস পর্যটন খাত। আমাদের পর্যটন খাতে বড় বিনিয়োগ করা গেলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে। সুন্দরবনে পর্যটক বাড়াতে নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সুন্দরবন ট্যুরস লাইভের স্বত্বাধিকারী গোলাম রহমান বিটু বলেন, এটি করা খুবই প্রয়োজন। তাহলে পর্যটন খাত থেকে সরকার বড় রাজস্ব পাবে।

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০