‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে পদযাত্রা করেছে তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি। এই পদযাত্রায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীসহ তিস্তাপাড়ের মানুষের ঢল নামে। কর্মসূচি থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বক্তারা। ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচির সমাপনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, উত্তরাঞ্চলের পানির ন্যায্য হিস্যা বঞ্চিত এই মানুষেরা আজকে সারা বিশ^কে জানিয়ে দিতে চায় যে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি যে অভিন্ন নদী- এই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি কারও কোন করুণার বিষয় নয়। এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্য। এটি বাংলাদেশের প্রাপ্য। অথচ তিস্তা নদীর ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য আজকে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে তিস্তা রেলসেতু লালমনিরহাট পয়েন্টে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গত সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ১১টি পয়েন্টে এ কর্মসূচি একসঙ্গে শুরু হয়। পদযাত্রাটি লালমনিরহাট প্রান্তের তিস্তা ব্রিজ থেকে শুরু হয়ে রংপুরের কাউনিয়া বাজারে গিয়ে শেষ হয়। তিস্তা বিস্তৃত রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামের ১১টি পয়েন্টে স্মরণকালের এই বৃহৎ কর্মসূচিতে যোগ দেন এ অঞ্চলের সর্বস্তরের লাখো মানুষ। প্রথম দিনের মতো সমাপনী দিনেও সকাল থেকেই ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ, পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’। সেইসঙ্গে প্রতিবাদ হিসেবে দেশীয় সংগীত, নৃত্য, খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই পানি বন্টন নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অপ্রতিবেশীমূলক আচরণ করেই চলেছে। আজকে প্রায় ৫০ বছর হল ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায় নাই। এখন তিস্তা বাংলাদেশের জন্য আরেকটা অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সব আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে আমাদের প্রতিবেশী উজানের গজলডোবায় একটা বাঁধ নির্মাণ করেছে। এটা করে তিস্তার স্বাভাবিক এই পানি প্রবাহকে তারা নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। তাদের এই অপ্রতিবেশীমূলক আচরণের কারণে আজকে উত্তরাঞ্চলের এই কোটি জনগণ বন্যায়, খরায় দূর্বিসহ জীবন পার করছে। পানির অভাবে তিস্তার বুকে আজকে ধু ধু বালুচর। একদিকে পানি অভাবে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল। আবার হঠাৎ করেই উজান থেকে ছেড়ে দিচ্ছে পানি! সেই পানির কারণে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি। শস্যের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় লক্ষ কোটি টাকার।
তিনি বলেন, ৫ই আগস্ট একজন (শেখ হাসিনা) এদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছেন। একটা খুনি ও স্বৈরাচার এদেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছে। এই স্বৈরাচার একবার একটা কথা বলেছিল, ‘ভারতকে যা দিয়েছি, সেটি তারা সারাজীবন মনে রাখবে।’ এই ভারত শুধু পলাতক স্বৈরাচারকেই মনে রেখেছে। বাংলাদেশের জনগণকে তারা মনে রাখেনি। সেজন্য পানির ন্যায্য হিস্যা বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ জনগণের মনে প্রশ্ন, পলাতক স্বৈরাচার ভারতকে যা দিয়েছে, সেই পলাতক স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেয়া ছাড়া ভারত কি বাংলাদেশ আর কিছু দিয়েছে? কিছু দেয় নাই।
Add Comment