গত সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বাড়িতে হঠাৎই ডাকাত হানা দেয়। ডাকাতের দল বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে চান না পরিবারটির সদস্যরা। খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহের জন্য গেলে ওই বাড়ির ষাটোর্ধ্ব গৃহকর্ত্রী হাত জোড় করে বলেন, ‘প্লিজ, আপনারা কিছু লিখিয়েন না। পরে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে। আপনারা লিখলে আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে? যা হওয়ার হয়েছে। আমরা পুলিশকে জানাব না।’
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে ওই বাড়ির অবস্থান। সীমানাপ্রাচীরে ঘেরা পাকা একতলা বাড়িতে থাকেন গৃহকর্ত্রী, তাঁর এক পুত্রবধূ ও দুই নাতি। বড় ছেলে পরিবার নিয়ে থাকেন ইউরোপের একটি দেশে। ছোট ছেলে চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম নগরে। অতীতে কখনো চুরির ঘটনাও ঘটেনি বাড়িটিতে। এবার ডাকাতি হওয়ার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
গৃহকর্ত্রী ও আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার রাত দেড়টার দিকে আটজনের একটি ডাকাত দল প্রবেশ করে ওই বাড়িতে। এরপর পরিবারের সদস্যদের হাত-পা, মুখ বেঁধে সব লুটে নেয়।
গৃহকর্ত্রী বলেন, তিনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনেছেন, এই কথাও জানত ডাকাতেরা। তাদের প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র ছিল। তাঁর পুত্রবধূর কক্ষে ঢুকে ডাকাতেরা নাতিকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। তিনি তখন বলেন, ‘যা যা লাগে নিয়ে যান, নাতিকে মারবেন না।’ তারা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ঘরে অবস্থান করে। পরে তাঁকে পুত্রবধূর কক্ষে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। যাওয়ার সময় ডাকাতেরা হুমকি দেয়, পুলিশকে জানালে পরে এসে মেরে ফেলব।
ভোর চারটার দিকে জানালা দিয়ে একজনকে ডেকে গৃহকর্ত্রী বলেন, তাঁর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। তবে ডাকাত দল কী নিয়ে গেছে, তিনি বলতে রাজি হননি। বারবারই বলছিলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।’
ওই নারীর ভাই একটি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বোনের ঘরে কোনো পুরুষ ছিল না। আগে কখনো চুরি-ডাকাতি হয়নি। এবার ডাকাতেরা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মুঠোফোনসহ নানা জিনিসপত্র নিয়ে যায়।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা পাহাড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অর্পিতা মুৎসুদ্দি বলেন, একলা ঘরে ডাকাত ঢুকে নানা জিনিসপত্র নিয়ে যায়। কী কী নিয়েছে, তা গৃহকর্ত্রী প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা মামলাও করতে চান না।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই বাড়িতে পুলিশ গিয়ে তদন্ত করছে। ডাকাতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা না দেওয়ায় ডাকাতদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে উঠেছে।
Add Comment