শিক্ষা

জান্নাত লাভের সহজ আমল :: সিএইচআরএম সংকলন

জান্নাত লাভের সহজ আমল ::
ইসলাম মানুষকে সর্বদা জান্নাতের পথ দেখায়। ইসলামে রয়েছে এমন কিছু আমল যা মানুষকে খুব সহজেই জান্নাতে পৌঁছে দেয়। পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী।পরকালই অসীম-অনন্ত। দুই দিনের এই জীবনে তাই জান্নাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিটি মুমিনের শেষ ঠিকানা জান্নাত। জান্নাত অনন্ত সুখের শান্তি-সুনিবিড় আধার। জান্নাতে যাওয়ার পথ ও প্রক্রিয়া মহান আল্লাহ অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ নিজেই তার বান্দাদের জান্নাতের পথে ডেকেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শান্তির ঘরের দিকে ডাকছেন।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ২৫) ।
ফরজ নামাজ : নামাজ জান্নাতের চাবিকাঠি। জান্নাতে যেতে হলে নামাজের যত্ন নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। রবিআ ইবনে কাআব আসলামি (রা.) বলেন, ‘এক রাতে আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তাঁর অজুর পানি এনে দিলাম এবং প্রয়োজনীয় কাজ করে দিলাম। তিনি আমাকে বললেন, আমার কাছে কী চাও। আমি বললাম, আপনার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। তিনি বললেন, আর কিছু? আমি বললাম, এটিই চাই। তিনি বললেন, অধিক সিজদার মাধ্যমে তোমার জন্য আমাকে সাহায্য করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৮৯) অর্থাৎ বেশি বেশি নামাজ পড়ো।
সুন্নাত নামাজ :
ফরজ নামাজের আগে-পরে সুন্নত নামাজগুলো আদায় করার গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে সেগুলোকে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে। উম্মে হাবিবা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে-রাতে ১২ রাকাত নামাজ পড়ে তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানানো হয়। জোহরের আগে চার রাকাত। পরে দুই রাকাত। মাগরিবের পরে দুই রাকাত। এশার পরে দুই রাকাত। ফজরের আগে ২ রাকাত।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৬৩৬২)
মসজিদ নির্মাণ :
মসজিদ নির্মাণে অংশ নেওয়ার ফজিলত অনেক বেশি। মসজিদ নির্মাতার জন্য জান্নাতে আলিশান বাড়ি তৈরি করবেন আল্লাহ তাআলা। উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৫০)
হজ:
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ। কবুলকৃত হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করে, কোনো অশ্লীল কথা বলে না এবং পাপকাজে লিপ্ত হয় না, সে মায়ের পেট থেকে জন্ম নেওয়ার দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৫২১) আরো ইরশাদ হচ্ছে, ‘কবুলকৃত হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’ (আহমাদ, হাদিস : ১৪৫২২)
তাহাজ্জুদ ঃ
শেষ প্রহরে পৃথিবী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন আরামের বিছানা ছেড়ে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার নামই তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ জান্নাতে নিয়ে যাবে আমাদের। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে লোকসকল, সালামের প্রসার করো। খাবার খাওয়াও। রাতে যখন সবাই ঘুমে বিভোর তখন নামাজ পড়ো। শান্তির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৯৭)
কয়েকটি মূল্যবান শিষ্টাচার

 
কিছু শিষ্টাচারের ফজিলত অনেক বেশি। যেমন-উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের পক্ষ থেকে ছয়টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দাও, আমি তোমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। ১. সত্য কথা বলো। ২. ওয়াদা পূর্ণ করো। ৩. আমানত ফিরিয়ে দাও। ৪. লজ্জাস্থানের হেফাজত করো। ৫. দৃষ্টি সংযত করো। ৬. হাতকে বিরত রাখো।’ (আহমাদ, হাদিস : ২২৮০৯)
এতিমের তত্ত্বাবধান ঃ
এতিমের তত্ত্বাবধান করা অনেক সওয়াবের কাজ। এটি জান্নাতে যাওয়ার আমল। সাহাল ইবনে সাআদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নিজের তর্জনী ও মধ্যমা একত্র করে বলেন, ‘আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে এভাবেই থাকব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০০৫) পবিত্র কোরআনুল কারিমের দ্বিতীয় সূরা আল-বাক্বারা ২৫৫তম আয়াত হচ্ছে আয়াতুল কুরসি। কোরআনুল কারিমের মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত এটি। এতে সমগ্র মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর জোরালো ক্ষমতা ঘোষণা করা হয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকে না। (শুআবুল ঈমান : ২৩৯৫)।
জিকির একটি ইবাদত। সহজ ও কষ্টবিহীন ইবাদত।
অপরাপর ইবাদতগুলোতে কষ্ট সাধন করতে হয়। কিন্তু জিকিরের ক্ষেত্রে কোনো কষ্টই সইতে হয় না। এ ছাড়াও খাঁটি মুমিনের শান হলো জিকির। জিকির ছাড়া খাঁটি মুমিন হওয়া কল্পনাতীত। পৃথিবীর বুকে যত নবী-রাসূল, ওলি-আল্লাহ, বুজুর্গ ছিলেন সবার সব সময়ের আমল ছিল জিকির। জিকিরে দিল তাজা হয়। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, সাহাবি হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় পালনকর্তার কথা স্মরণ করে আর যে করে না তাদের উভয়ের দৃষ্টান্ত যথাক্রমে জীবিত ও মৃত। জিকির দিয়ে অন্যান্য ইবাদতের মজা ও স্বাদ পাওয়া যায়। ’এক হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যার ভাষ্য প্রায় এ রকম-বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহকে স্মরণ করে, আল্লাহ ততক্ষণ ওই বান্দাকে স্মরণ করে। ইবাদতের মর্মকথা হলো- আল্লাহকে সব সময় স্মরণ করা। আল্লাহর চিন্তা-ফিকির হৃদয়ে সদা জাগ্রত রাখা। এ কারণে দৈনন্দিন ইবাদত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যেন আল্লাহকে বান্দা সব সময় স্মরণ করতে বাধ্য হয়। এতে বোঝা যায় নামাজ, রোজা প্রভৃতি ইবাদত হলো আল্লাহকে স্মরণ করার মাধ্যম। আর জিকির হলো মাধ্যম ছাড়া আল্লাহকে স্মরণ করা। এক স্থানে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দেন-‘আকিমিস সালাতা লিজিকরি’। অর্থাৎ নামাজ আদায় করো আমার স্মরণের জন্য।
যে সহজ নেক কাজে রয়েছে শান্তি ও মুক্তির ঘোষণা
হাদিসের পরিভাষায় আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা এবং রমজানের রোজা পালন করা হলো আমলে সালেহ বা নেক কাজ। এ সব কাজ মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় ক্ষতি ও ধ্বংসের হাত থেকে হেফাজত করে। এমনটিই ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি। ঈমান, নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ ছাড়াও যত ইবাদত-বন্দেগি আছে এগুলোকেই আমরা আমলে সালেহ বা নেক কাজ মনে করি। কিন্তু এমন অনেক (আমলে সালেহ) নেক কাজ আছে যেগুলো পালন করা বা মেনে চলা একেবারেই সহজ কিন্তু মানুষ তা পালন থেকে নিজেদের বিরত রাখে। আবার অনেকে সেগুলোকে আমলে সালেহ বা নেক কাজ মনেই করে না। শুরুতেই জেনে নেয়া যেতে পারে আমলে সালেহ বা নেক কাজ কী? ‘আমলে সালেহ’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ভালো আচরণ, উত্তম কাজ, গ্রহণযোগ্য কাজ। কুরআনুল কারিমের অনেক জায়গায় আমলে সালেহ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সাধারণত যার অনুবাদ দাঁড়ায়- নেক আমল, ভালো কাজ বা সৎকাজ। তাহলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ ইবাদত-বন্দেগি ছাড়াও সমাজে কোনো অশান্তিমূলক কাজ বন্ধ করে শান্তি স্থাপন করা, নিজ পরিবার কিংবা অন্যের কল্যাণে যে কোনো কাজ করাই হলো আমলে সালেহ। তা হতে পারে রাস্তা থেকে সামান্য পাথর টুকরা কিংবা কাঁটা অপসরণের মতো ক্ষুদ্র কাজ।

আমলে সালেহ
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে আমলে সালেহ-এর কথাগুলো এভাবে তুলে ধরেছেন-‘ঈমান গ্রহণ করার পর যে কোনো নারী-পুরুষ আমলে সালেহ করবে, আমি তাকে দান করবো উত্তম পবিত্র জীবন এবং তাদের সবচেয়ে ভালো কাজগুলোর ভিত্তিতে পুরস্কার দেবো।’ (সুরা আন-নাহল : আয়াত ৯৭) তবে যে কেউ ঈমান আনবে এবং আমলে সালেহ্ করবে, তার জন্যে থাকবে সর্বোত্তম পুরস্কার এবং তার প্রতি আমার বিষয়গুলো বলবো সহজভাবে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৮৮) আল্লাহ তাআলা মানুষকে আমলে সালেহ তথা নেক কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে পুরস্কারের কথা বলেছেন। কিন্তু কুরআনুল কারিমের শেষ দিকে সময়ের কসম খেয়ে আল্লাহ তাআলা তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।’ অতঃপর আল্লাহ তাআলা কিছু সংখ্যক মানুষকে ক্ষতির এ সংবাদ থেকে বাদ রেখেছেন। আর তাদের একাংশ হলো যারা ‘আমলে সালেহ’ বা নেক আমল করে। কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী মানুষ নেক আমল করলে যেমন পুরস্কার পাবে তেমিন নেক আমল করলে দুনিয়া ও পরকালের ক্ষতি থেকেও বাঁচতে পারবে। সুতরাং মানুষের উচিত, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নেক আমলে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। পাশাপাশি সহজে নেক আমল করার উপায়গুলো জেনে নেয়া। এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো করলে সহজে নেক আমল তথা আমলে সালেহ হয়ে যাবে। আর তাহলো-
ক্স ইলম বা জ্ঞানার্জন করা। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সমাজের কল্যাণকর কাজ করা।
ক্স সবর বা ধৈর্যধারণ করা। সবর বা ধৈর্যধারণ গোনাহ মাফ এবং সাওয়াব লাভের অন্যতম উপায়।
ক্স নিয়তের বিশুদ্ধতা। যে কোনো কল্যাণকর কাজের নিয়ত করা। করতে পারলে যেমন সাওয়াব আছে। না করতে পারলেও নিয়ত করার সঙ্গে সঙ্গে তা সাওয়াবে পরিণত হয়।
ক্স আন্তরিকতা। যে কোনো কল্যাণকর কাজে আন্তরিকতাসহ যোগদান করা। করতে না পারলে তা সম্পাদনে, সহযোগিতায় বা পরমার্শে আন্তরিক হওয়া।
আল্লাহ নিকট তিন ব্যক্তির ইবাদত অপছন্দ
কিছু কাজ মানুষের আমলকে ধ্বংস করে দেয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা মানুষকে ঈমানহারাও করে দিতে পারে। তাই নেক আমলের পাশাপাশি ওই সব অভ্যাসও ত্যাগ করতে হবে, যেগুলো আমাদের আমলকে ধ্বংস করে দিতে পারে। নিম্নে এমন কয়েকটি অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হলো। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার এক বিঘত ওপরেও ওঠে না : যে ব্যক্তি জনগণের অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও তাদের ইমামতি করে, যে নারী তার স্বামীর অসন্তুষ্টিসহ রাত যাপন করে এবং পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী দুই ভাই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৭১) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের কান ডিঙায় না (কবুল হয় না)। পলায়নকারী দাস যে পর্যন্ত তার মালিকের কাছে ফিরে না আসে; যে মহিলা তার স্বামীর বিরাগ নিয়ে রাত কাটায় এবং যে ইমামকে তার সস্প্রদায়ের লোকেরা পছন্দ করে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬০)
সহজ ১০ আমলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি
মানুষ সৃষ্টিকুলের সেরা জীব হলেও অন্যায়, অনাচার-পাপাচারে লিপ্ত। এতদ্বসত্ত্বেও আল্লাহতায়ালা মানুষকে সুযোগ দিলেন পাপমুক্ত হওয়ার, তওবা করে সঠিক ফিরে আসারা। এ জন্য তিনি যুগে যুগে পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী-রাসূল। এরই ধারাবাহিকতায় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাম দুনিয়ায় আগমন করেন। তার আনীত ধর্ম ইসলাম ও আল্লাহর প্রেরিত কিতাব কোরআনে কারিম মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ দেখায়। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যেক মানুষের আকাঙ্খা ও চেষ্টা দরকার। নিয়মিত ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি এমন কিছু সহজ আমল রয়েছে, যা মানুষকে খুব সহজে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ সুগম করে।
গীবতমুক্ত জীবনযাপন করা
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করে, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।’ –সুনানে তিরমিজি: ১৯৩১
দৈনিক ৩৬০ বার তাসবিহ-তাহলিল ও তাকবির আদায় করা
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক আদম সন্তানকেই ৩৬০টি গ্রন্থির ওপর সৃষ্টি করেছেন (আর প্রতিটি গ্রন্থির কিছু সদকা রয়েছে)। সুতরাং যে ব্যক্তি ওই সংখ্যা পরিমাণ ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষের চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা অথবা একটি হাড় সরাল, ভালো কাজের আদেশ করল কিংবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যময় কাজ করল), সে ওই দিন এমতাবস্থায় সন্ধ্যা যাপন করল, সে নিজেকে জাহান্নাম থেকে দূরে করে নিলো। -সহিহ মুসলিম: ২২২০
চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করা
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবির) সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে আল্লাহতায়ালা তাকে দু’টি জিনিস থেকে মুক্তি দেবেন। ১. জাহান্নাম হতে মুক্তি ও ২. মুনাফিকি হতে মুক্তি। -সুনানে তিরমিজি: ২৪১
বেশি বেশি দান করা
সাহাবি হজরত আদি ইবনে হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারিম (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো যদিও এক টুকরো খেজুর সদকা করে হয়।’ –সহিহ বোখারি: ১৪১৭
জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করা
আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহতায়ালার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জাহান্নাম হতে মুক্তি চায়, জাহান্নাম তখন আল্লাহতায়ালার কাছে বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। -সুনানে তিরমিজি: ২৫৭২
জোহরের ফরজ নামাজের পূর্বে এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। -ইবনে মাজাহ: ১১৬০
মানুষের সঙ্গে মধুময় আচরণ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো না কোনো ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোনো ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়) সহজ-সরল, নম্্রভাষী ও সদাচারী। -সুনানে তিরমিজি: ২৪৮৮
চোখকে গোনাহ থেকে হেফাজত করা
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দু’টি চোখকে স্পর্শ করবে না- ১. আল্লাহতায়ালার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে। ২. আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে রাত পার করে। -সুনানে তিরমিজি: ১৬৩৯
ফরজ রোজার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল রোজা রাখা
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘রোজা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরূপ।’ –সহিহ বোখারি: ১৮৯৪ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহতায়ালা ওই এক দিনের বিনিময়ে তার থেকে জাহান্নামকে ৭০ বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন। -সহিহ বোখারি: ২৮৪০
কন্যাসন্তানদের ভালোভাবে লালন-পালন করা
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দু’টি কন্যা সঙ্গে করে আমার কাছে এসে কিছু ভিক্ষা চাইল। আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু ছিলো না। আমি তাকে তা দিয়ে দিলাম। খেজুরটি সে দু’ভাগ করে কন্যা দু’টিকে দিয়ে দিলো। তা থেকে সে নিজে কিছুই খেল না। এরপর সে উঠে বের হয়ে গেল। তারপর নবী করিম (সা.) আমাদের কাছে এলে তার কাছে ওই ঘটনা শোনালাম। ঘটনা শুনে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি একাধিক কন্যা নিয়ে সঙ্কটাপন্ন হবে এবং সে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। সে কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল (পর্দা) হবে। -সহিহ বোখারি: ১৪১৮
দরিদ্রতা আসে চার জিনিসের কারণে ঃ
১। তাড়াহুড়া করে নামায পড়ার কারণে।
২। দাঁড়িয়ে পেশাব করার কারণে।
৩। পেশাবের জায়গায় অজু করার কারণে।
৪। দাঁড়িয়ে পানি পান করার কারণে।
সচ্ছলতা আসে সাত জিনিসের কারণে ঃ
১। আল কুরআন তিলাওয়াত করার কারণে।
২।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার কারণে।
৩। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার কারণে।
৪। দরিদ্র ও অক্ষমদের সাহায্য করার কারণে।
৫। গোনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।
৬। পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদাচরণ করার কারণে।
৭। সকালে সূরা ইয়াসিন এবং সন্ধ্যায় সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করার কারণে। তিরমিজি (৫৫৬৭৩)

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০