মানবাধিকার

ইসলাম ও মানবাধিকার : ড. মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ

আলহাজ্ব ড. মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ :

এ পৃথিবীতে ইসলামের আগমন ঘটেছে মানুষের অধিকার, মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। মানুষ অন্য সব সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে- এটাই ইসলামের অভিপ্রায়। মানবাধিকার বিষয়ে ইসলামের শিক্ষাই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা। প্রত্যেক মানুষ অন্য মানুষকে তার নিজের মতোই মনে করবে, অন্যের অধিকারকে নিজের অধিকার মনে করবে, অন্যের পছন্দকে নিজের পছন্দ মনে করবে- ইসলাম সেই শিক্ষাই দিয়েছে। ইসলাম তার অনুসারীদের বলে, তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজের ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা পছন্দ করবে নিজের জন্য (বুখারি)। ইসলাম আরও বলে, তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ইমান আনবে আর ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে (সহিহ মুসলিম)। ইসলাম আরও বলে, যে নিজেকে ইমানদার দাবি করে, সে যেন প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করে (বুখারি, পর্ব :৭৮)। এতিমদের সম্পদ গ্রাস না করতে ইসলাম বারবার তাগিদ দিয়েছে। মুসাফির, মেহমান, অসহায়, সহকর্মী, সহযাত্রী- কারও অধিকারের কথা বর্ণনা করতে ইসলাম কার্পণ্য করেনি। এক কথায় একজন মানুষকে জীবন চলার পথে যত মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে হয়, প্রত্যেকের অধিকারের কথাই ইসলাম বলেছে (অধ্যয়ন করুন সুরা নিসা, বিশেষ করে প্রথম রুকু ও ৩৬ নম্বর আয়াত। সুরা বানি ইসরাইল, ২৬ নম্বর আয়াত)। ইসলাম আলল্গাহকে সিজদাহ করাকে যেমন ইবাদত গণ্য করে, ঠিক তেমনি ইবাদত গণ্য করে মানবাধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়াকে। বিদায় হজের ভাষণে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘আজকের এই মাস, দিন এবং শহর তোমাদের কাছে যেমন পবিত্র, ঠিক তেমনই পবিত্র তোমাদের একজনের কাছে আরেকজনের জীবন, সম্পদ ও সম্মান।’ ইসলামের ঘোষণা, কেউ কারও অধিকার হরণ করলে আলল্গাহ তা ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না যার অধিকার হরণ করা হয়েছে, সে ক্ষমা করে দেয়। ইসলাম শুধু মুসলমানদের পারস্পরিক অধিকারের কথাই বলে না, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের প্রতিও যত্নবান হতে বলে। সেই শিক্ষা আমরা মুহাম্মদের (সা.) জীবন থেকে পাই। মদিনায় হিজরতের পর তিনি মদিনা সনদ তৈরির মাধ্যমে শুধু মুসলিমদের নয়, বরং সেখানকার সব ধর্ম ও গোত্রের মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যুদ্ধের ময়দানেও তিনি মানবাধিকারের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন। কোনো নারী, বৃদ্ধ কিংবা কোনো ঘরে আশ্রয় নেওয়া শত্রুকেও যেন আক্রমণ করা না হয়, সে ব্যাপারে তিনি অনুসারীদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিতেন। সীমান্তে টহল দেওয়ার সময় জনৈক কাফের মুসলিম দলের হাতে নিহত হলে মহানবী (সা.) মুসলিম দলকে ভর্ৎসনা করেন এবং নিহতের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেন। যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে তিনি এমনই মানবিক আচরণ করতেন যে, মুগ্ধ হয়ে তারা ইসলাম গ্রহণ করত। অথচ আজ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে চরমভাবে। ইসলামে মানবাধিকার মানুষ অন্য সব সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে- এটাই ইসলামের অভিপ্রায়। মানবাধিকার বিষয়ে ইসলামের শিক্ষাই সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষা।

প্রত্যেক মানুষ অন্য মানুষকে তার নিজের মতোই মনে করবে, অন্যের অধিকারকে নিজের অধিকার মনে করবে, অন্যের পছন্দকে নিজের পছন্দ মনে করবে- ইসলাম সেই শিক্ষাই দিয়েছে। ইসলাম তার অনুসারীদের বলে, তোমাদের কেউ ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজের ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা পছন্দ করবে নিজের জন্য (বুখারি)। ইসলাম আরও বলে, তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ইমান আনবে আর ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে (সহিহ মুসলিম)। ইসলাম আরও বলে, যে নিজেকে ইমানদার দাবি করে, সে যেন প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করে (বুখারি, পর্ব :৭৮)। এতিমদের সম্পদ গ্রাস না করতে ইসলাম বারবার তাগিদ দিয়েছে। মুসাফির, মেহমান, অসহায়, সহকর্মী, সহযাত্রী- কারও অধিকারের কথা বর্ণনা করতে ইসলাম কার্পণ্য করেনি। এক কথায় একজন মানুষকে জীবন চলার পথে যত মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে হয়, প্রত্যেকের অধিকারের কথাই ইসলাম বলেছে (অধ্যয়ন করুন সুরা নিসা, বিশেষ করে প্রথম রুকু ও ৩৬ নম্বর আয়াত। সুরা বানি ইসরাইল, ২৬ নম্বর আয়াত)। ইসলাম আলল্গাহকে সিজদাহ করাকে যেমন ইবাদত গণ্য করে, ঠিক তেমনি ইবাদত গণ্য করে মানবাধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়াকে। বিদায় হজের ভাষণে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) ঘোষণা করেন, ‘আজকের এই মাস, দিন এবং শহর তোমাদের কাছে যেমন পবিত্র, ঠিক তেমনই পবিত্র তোমাদের একজনের কাছে আরেকজনের জীবন, সম্পদ ও সম্মান।’ ইসলামের ঘোষণা, কেউ কারও অধিকার হরণ করলে আলল্গাহ তা ক্ষমা করবেন না, যতক্ষণ না যার অধিকার হরণ করা হয়েছে, সে ক্ষমা করে দেয়। ইসলাম শুধু মুসলমানদের পারস্পরিক অধিকারের কথাই বলে না, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের প্রতিও যত্নবান হতে বলে। সেই শিক্ষা আমরা মুহাম্মদের (সা.) জীবন থেকে পাই। মদিনায় হিজরতের পর তিনি মদিনা সনদ তৈরির মাধ্যমে শুধু মুসলিমদের নয়, বরং সেখানকার সব ধর্ম ও গোত্রের মানুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যুদ্ধের ময়দানেও তিনি মানবাধিকারের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন। কোনো নারী, বৃদ্ধ কিংবা কোনো ঘরে আশ্রয় নেওয়া শত্রুকেও যেন আক্রমণ করা না হয়, সে ব্যাপারে তিনি অনুসারীদের কঠোরভাবে নির্দেশ দিতেন। সীমান্তে টহল দেওয়ার সময় জনৈক কাফের মুসলিম দলের হাতে নিহত হলে মহানবী (সা.) মুসলিম দলকে ভর্ৎসনা করেন এবং নিহতের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেন। যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে তিনি এমনই মানবিক আচরণ করতেন যে, মুগ্ধ হয়ে তারা ইসলাম গ্রহণ করত। অথচ আজ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে চরমভাবে।

মানবাধিকার বর্তমান বিশ্ব খুবই আলোচিত শব্দ। বিশ্বে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকারের মধ্যে রয়েছে-জীবন ধারনের অধিকার, ধর্মের অধিকার, কর্মসংস্থানের অধিকার, পরিবার গঠনের অধিকার, ন্যায়বিচার লাভের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, এই অধিকার লঙ্ঘিত হলে মানুষের বেঁচে থাকা অর্থহীন ও অসম্ভব হয়ে পড়বে।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘে সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ ঘোষিত হয় এবং এ সনদ কার্যকারী করার জন্য মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়। জাতিসংঘের বিঘোষিত সার্বজনীন ঘোষণা পত্রের ৩০টি ধারা মানুষের মৌলিক ও আইনগত অধিকার সংরক্ষণের জন্য চমৎকার ও অতুলনীয় সন্দেহ নেই। ইসলামী মানবাধিকার পৃথিবীর কোন অপশক্তি নেই যে সে সকল মানবাধিকার কখনো রহিত করতে পারে। ইসলামে মানবাধিকার ধারণা শুধু কোনো ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এর প্রত্যেকটি মুসলমানের ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মানবাধিকারই হচ্ছে ইসলামী আইনের মূল ভিত্তি। ইসলাম মানুষের মর্যাদার ওপর অসাধারণ গুরুত্বারোপ করেছেন। এই বিশ্বচরাচরে সৃষ্টিকুলের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান হচ্ছে মানুষ। তাকে অন্যান্য সকল সৃষ্টির তুলনায় উত্তম কাঠামোর সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং জগতের সমস্ত নিয়ামত ও শক্তিসমূহ মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন করে তার সেবায় নিয়োজিত করেছেন। মহান আলাহতায়ালা বলেন, “তোমরা কি দেখ না যে, আলাহ আকাশম-লী ও ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই তোমাদের কল্যাণে নিয়ন্ত্রণাধীন রেখেছেন এবং তোমাদের প্রতি তার প্রকাম্য ও অপ্রকাম্য অনুগ্রহ প্রকাশ করেছেন”। (সূরা লোকমান-২০)
মানবধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে মানুষে মানুষে সকল বৈষম্যের বিলোপের কথা এসেছে। ইসলাম ধর্ম ও এরূপ বৈষম্যের বিপক্ষে। ইসলাম মানবজাতিকে জন্মগতভাবে সমানভাবে সমান মর্যাদায় অভিসিক্ত করেছে। মহান আলাহতায়ালা বলেন, “ও মানবজাতি! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন গোত্র ও বংশে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাবান যে অধিক মুক্তাকী”। (সূরা হুজরাত-১৩)
মানুষের জীবন, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সাথে ইসলামে বিবেচনা করা হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজীবন অতি পবিত্র এক সম্পদ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহ যে জীবনকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তোমরা তাকে হত্যা করো না। এবং যদি কেউ অন্যায়ভাবে মারা পড়ে। তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি ক্ষমতা দিয়েছি প্রতিকার করার। কিন্তু সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা অতিক্রম না করে। কেননা সে সাহায্য পেয়েছে”। (সূরা বনী ঈসরাঈল-৩৩)
ইসলাম মানবজীবন অসঙ্গত কারণে হরণ করতে নিষেধ করেছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “নর হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে, অভিযুক্ত কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীর প্রাণ রক্ষা করলো”। (সূরা মায়েদা-৩২)
ইসলামী শাসনে ন্যায্য বিচার পাবার অধিকার রয়েছে খুনের বদলে খুন, ব্যভিচারের শাস্তি আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ঠুর মনে হলেও সমাজে স্থায়ী শান্তি আনার জন্য সুষ্ঠু বিচারের বিকল্প নেই। ইনসাফ এবং সাম্যনীতি ইসলামী বিচার ববস্থার অন্যতম মূল বৈশিষ্ট। মহান আলাহতায়ালা বলেন, “তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায় পরায়ণতার সাথে করবে”। (সূরা নিসা-৫৮)
ইসলামে হালাল উপায়ে অর্জিত ও ব্যক্তিগত সম্পদের স্বীকৃত। তবে এ ক্ষেত্রে শরিয়ত নির্ধারিত সমস্ত অধিকার ও কর্তব্য পালন করতে হবে। মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা, নিকটাত্মীয়ের লালন-পালন ও দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হবে। অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা যাবে না। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না”। (সূরা বাকারা-১৮৮)
ইসলামে মানুষের বিবেক ও ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে। দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। সত্য পথ ভ্রান্ত পথ থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে”। (সূরা বাকারা-২৫৬)
রাসূল (স.) তার কথা ও কর্মের মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চূড়ান্ত ও বাস্তবরূপে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত করে সফলকাম হয়েছে। বিদায় হজে রাসূল (স.) যে ভাষণ দান করেন কোরআন ও হাদিসে এর স্বীকৃতি এভাবে দেয়া হয়েছে। “অদ্য আমি তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণতা দান করলাম, তোমাদের ওপর আমার নিয়ামতের সমাপ্তি ঘোষণা করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম”। (আল কোরআন)

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০