রাষ্ট্র হিসেবে বিধ্বস্ত হতে পারে আফগানিস্তান। সেই অবস্থা থেকে দেশটিকে রক্ষা করতে তাদেরকে সাহায্য বিষয়ক প্যাকেজ সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এই সহায়তা দিতে হবে এ জন্য যে, আফগানিস্তানকে আইএস-সহ বৈশ্বিক সন্ত্রাসের নিরাপদ স্বর্গ হয়ে উঠা রোধ করতে হবে। মিডল ইস্ট আই’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান এসব কথা বলেন। তার ওই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে সোমবার। এতে ইমরান খান বলেন, তালেবান শাসকগোষ্ঠীকে সমর্থন দেয়া ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। যদি তালেবানদের সমর্থন দিতে ব্যর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র তাহলে তাতে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। আগস্টে রাজধানী কাবুল তালেবানদের দখলে আসার বিষয়টি তুলে ধরেন ইমরান খান।
বলেন, বাস্তবেই এটা এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তাদেরকে প্রত্যাহারের বিষয়ে হতাশ হয়েছে। তারা কল্পনা করেছিলেন কিছুটা গণতন্ত্র আসবে। জাতি গঠন হবে। নারীরা উদারতার সুযোগ পাবে। কিন্তু হঠাৎ করে তারা দেখলেন, তারা আবার সেই তালেবানদের কবলে। এ নিয়ে অনেক ক্ষোভ আছে। হতাশা আছে। বিস্ময় আছে। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব না নিলে আফগানিস্তানে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে বলে আমরা উদ্বিগ্ন এবং তাতে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
ইমরান খান আরো বলেন, তালেবানদের সাপোর্ট দেয়ার মাধ্যমে আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট বা আইএস’কে ‘চেক’ দেয়া যাবে। আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সরকারকে সাপোর্ট দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সবকিছুই করা উচিত। তিনি আরো যোগ করেন, বিশ্ববাসীকেও আফগানিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত। এখনও তালেবানদের মধ্যে কট্টরপন্থি আছেন। যদি তাদের কাছ থেকে বিশ্ববাসী সরে যায় তাহলে এই তালেবানরা সহজেই ২০০০ সালের তালেবানদের রূপ ধারণ করবে। আর তাতে দেখা দেবে এক বিপর্যয়।
ইমরান খানের মতে, আফগানিস্তানে যে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয় তা নির্ভর করে বিদেশি সাহায্যের ওপর। এর অর্থ হলো তালেবানদের ওপর যদি অবরোধ দেয়া হয় তাহলে আফগানিস্তানে এক ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে। তিনি আরো সতর্কতা দিয়েছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তানকে ১৯৯০-এর দশকের মতো ত্যাগ করে তাহলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও রাজনীতিক হ্যারি রিড যখন সিনেটর ছিলেন, তখন ২০০৮ সালে তাদেরকে সতর্ক করেছিলেন ইমরান খান। বলেছিলেন, তারা আফগানিস্তানে একটি ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। সেখানে সামরিক উপায়ে কোনো সমাধান নেই। এর দু’বছর পরে পাকিস্তানের তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কিয়ানি যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে একই বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউই এসব কথায় কান দেননি। ইমরান খান বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো, তারা তাদের জেনারেলদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন। আপনারা কি জানেন, জেনারেলরা সব সময় কি পরামর্শ দেন: বলেন, আরো সেনা দাও। আরও সময় দাও।
কাবুলের পতন প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, কাবুলে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সময় এক রক্তপাত ঘটবে বলে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। সেখানে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। এ জন্য আমরা খুব বেশি স্বস্তি বোধ করি। কিন্তু এটাও আমরা বুঝতে পারছি যে, এ জন্য আমাদেরকে দায়ী করা হচ্ছে। তিন লাখ আফগান সেনা সদস্য কোনো লড়াই ছাড়াই আত্মসমর্পণ করেছে। ফলে এটা স্পষ্ট যে, আমরা তাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে বলিনি।
আফগানিস্তানে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানে বর্তমানে যে সরকার আছে, তা সবার অংশগ্রহণমূলক নয়। তবে এটা হলো অন্তর্বর্তী সরকার। আফগানিস্তানের সমাজ বহুজাতিক, বহুমাত্রিক। তাই সেখানে সবার অংশগ্রহণমূলক সরকার থাকা উচিত। এ জন্য সরকারে ব্যাপক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে তালেবানদের উৎসাহিত করতে তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে পাকিস্তান।
মৌলিক অধিকার নিয়ে ইমরান খান বলেন, তালেবানরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করার জন্য তাদেরকে প্রণোদনা দেয়া উচিত। তালেবানরা যথার্থই বিবৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। যদি তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়া হয়, তাহলে তার মধ্য দিয়ে আসলে কি করা হচ্ছে! সবচেয়ে ভাল উপায় হলো তাদেরকে প্রণোদনা দেয়া। কিন্তু আপনি যদি তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন, তাহলে আমার কল্পনায় তাদের যে প্রকৃতি দেখতে পাই তাহলো, তারা পশ্চৎধাবী হবেন। এর ফলে উল্টো ফল আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশকিছু পরিষ্কার ধারা রয়েছে। কিছু কিছু ইস্যুতে স্বচ্ছ এক নেতৃত্বের ঘাটতি আছে।
তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, ৫০টি গ্রুপের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে টিটিপি। কিন্তু সরকার অংশবিশেষের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী, যারা পুনর্মিলিত হতে চায়। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করি আলোচনার টেবিলে সব রকম বিদ্রোহের ইতি ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানের তালেবানরা পাকিস্তানকে নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাতে টিটিপি’কে অনুমতি দেবে না। কাবুলের সাবেক শাসক গোষ্ঠী ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো টিটিপিকে এমন হামলা চালানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। আফগানিস্তানে এখনও যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন ব্যবহার করছে। এর নিন্দা জানিয়েছেন ইমরান খান।
Add Comment